- বাংলাদেশে সমাজকর্ম পাঠের গুরুত্ব বর্ণনা কর?
সমাজকর্ম হলো একটি সাহায্যকারী পেশা এবং সমস্যা সমাধানের বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া। প্রাচীনকাল থেকেই স্বেচ্ছামূলক বা অপেশাদার সমাজকল্যাণ সমাজের মানুষের প্রয়োজন এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিয়ে আসছিল। কিন্তু আধুনিক যুগের শিল্পায়ন ও শহরায়নের ফলে উদ্ভূত নতুন ও জটিল সমস্যাসমূহের সমাধান যখন গতানুগতিক সমাজকল্যাণ দ্বারা মোকাবিলা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে, তখন বস্তুত নতুন এবং জটিল সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত সমাধানের লক্ষ্যেই সমাজকর্মের অভ্যুদয়।
সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যেই যেহেতু সমাজকর্মের উদ্ভব, আর বাংলাদেশের সমাজে যেহেতু অসংখ্য সমস্যা বিরাজমান এ কারণে বাংলাদেশে সমাজকর্ম পাঠের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। নিম্নে বাংলাদেশে সমাজকর্ম পাঠের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো-
বাংলাদেশের জনগণের অজ্ঞতা ও নিরক্ষরতার কারণে সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করতে জানে না। এক্ষেত্রে সমাজকর্ম পেশার জ্ঞানধারী দক্ষ সমাজকর্মীগণ অজ্ঞ ও নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে প্রাপ্ত সম্পদের সদ্ব্যবহার করতে সমাজকর্ম পাঠ করা জরুরি।
বাংলাদেশের সঠিক আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য সমাজকর্ম পাঠ করা প্রয়োজন। কারণ সমাজকর্মের জ্ঞান ও কৌশল প্রয়োগ করে দেশের প্রচলিত সামাজিক কার্যক্রমকে বাস্তবোপযোগী করে তোলা সম্ভব। তাই বাংলাদেশে সমাজকর্ম পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।
কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের উন্নয়ন করতে হলে অবশ্যই কৃষির উন্নয়ন করতে হবে। আর সমাজকর্ম কৃষকদের উন্নয়নের জন্য অজ্ঞতা ও কুসংস্কার দূর করে কৃষকদের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রযুক্তিনির্ভর উন্নতমানের চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে। এজন্য বাংলাদেশে সমাজকর্ম পাঠ করা একান্ত প্রয়োজন।
বাংলাদেশে বেকার জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানোর জন্য একদিকে যেমন দরকার প্রয়োজনীয় সুযোগ সৃষ্টির, তেমনি প্রয়োজন জনগণের মধ্যে স্বাবলম্বী মনোভাব গড়ে তোলা। সমাজকর্ম জনগণকে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদান করে স্বাবলম্বী হবার শিক্ষা প্রদান করে। তাই বাংলাদেশের জনগণকে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য সমাজকর্ম অধ্যয়ন করা প্রয়োজন।
সামাজিক সমস্যা সমাধানে সামাজিক সচেতনতা অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সমাজকর্ম পদ্ধতিসমূহ বিশেষ করে সামাজিক কার্যক্রম পদ্ধতি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যও সমাজকর্ম পাঠ করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য মানব সম্পদের উন্নয়ন সাধন করা দরকার। আর সমাজকর্ম অধ্যয়নের মাধ্যমে মানব সম্পদের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। মানব সম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে কিভাবে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটানো যায় সমাজকর্ম অধ্যয়নের মাধ্যমে। তা জানা যায়। তাই বাংলাদেশে সমাজকর্ম পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম।
বাংলাদেশের অসংখ্য সমস্যা অক্টোপাসের ন্যায় জড়িয়ে ধরে আছে। সমাজকর্ম এসব সমস্যার কারণ ও প্রকৃতি নির্ণয় এবং সমাধানের ব্যবস্থা করে থাকে। একারণে বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সমাজকর্ম পাঠ করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের জনগণের যথাযথ ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালনের শিক্ষা প্রদান করে। তাই বাংলাদেশের জনগণের সুষ্ঠু সামাজিক ভূমিকা পালন নিশ্চিত করার জন্য সমাজকর্ম পাঠ করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের জনগণের বহুমুখী সমস্যা সমাধান করে জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত করা প্রয়োজন। সমাজকর্ম মানুষকে সংগঠিত করার শিক্ষা প্রদান করে। একারণে বাংলাদেশে সমাজকর্ম পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।
বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকাতেই সবচেয়ে বেশি সমস্যা বিরাজমান। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশে সমাজকর্মের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
বাংলাদেশে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমূহ এদেশের সমাজব্যবস্থা, সামাজিক প্রক্রিয়া, সামাজিক আন্তঃক্রিয়া ও আধুনিক উন্নয়ন ন্নয়ন কৌশল সম্পর্কে কর্মীদের উন্নয়নের জন্য সমাজকর্ম অধ্যয়ন করা একান্ত প্রয়োজন। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান নেই বললেই চলে। এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাজই হবে সমাজের সমস্যা দূর করা।
বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ সামাজিক কুপ্রথা ও কুসংস্কারে বিশ্বাসী, যার ফলে এদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে না। সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য সমাজকর্ম পাঠ করা একান্ত জরুরি। তাই বাংলাদেশের সমাজদেহে বিরাজমান ব্যাপক কুপ্রথা ও কুসংস্কার
বাংলাদেশ গ্রামপ্রধানদেশ হওয়ায় স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়নমূলক কর্মসূচি প্রণয়ন এবং বাস্তাবায়নের জন্য স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বের বিকাশ সাধন করা অপরিহার্য। স্থানীয় নেতৃত্বের বিকাশ সাধনে বাংলাদেশে সমাজকর্ম পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। সমাজকর্ম বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে। একারণে একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ১৪. সামাজিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন বাংলাদেশ রাজনৈতিক উন্নয়নের জন্য কল্যাণমুখী সামাজিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা একান্ত প্রয়োজন।উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায় এদেশের আর্থসামাজিক সমস্যা এতোই।
পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশ একটি জটিল যে সরকারের একার পক্ষে এ সমস্ত সমস্যার কার্যকর সমাধান দেওয়া সম্ভব নয়। একারণে সরকারি ও বেসরকারি পদক্ষেপ এবং দক্ষ ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সমাজকর্মীদের সুদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও পরামর্শ নীতি ও পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলাদেশের সকল সমস্যাই কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব।
96 টি প্রশ্ন
95 টি উত্তর
0 টি মন্তব্য
2 জন সদস্য