সমাজকর্ম এ সাম্প্রতিক প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ

0 টি ভোট
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি লিখ?

ভূমিকা-

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় দেওয়ানি অধিকার লাভ করে ১৭৬৫ সালে। কতিপয় কর্মচারীর দুর্নীতির জন্য বাংলার ভাগ্যাকাশে নেমে আসে অন্ধকার। কারণ দেওয়ানি ক্ষমতা লাভের পর কোম্পানির কর্মচারীদের অত্যাচার, শোষণ, নির্যাতন বেড়েই চলে। তাই সংঘটিত হয় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। এসব কারণে ব্রিটিশ সরকার কোম্পানিকে দায়ী করে এবং ভারতবর্ষে নতুন একজন গভর্নর জেনারেল হিসেবে ওয়ারেন হেস্টিংসকে পাঠায়। হেস্টিংসের আমলে প্রথম রেগুলেটিং এ্যাক্ট পাস হয় যা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। এরপর ভারতে গভর্নর জেনারেল হয়ে আসেন লর্ড কর্নওয়ালিস। এ কর্নওয়ালিসের শাসনামলেই পূর্বের অনেক আলোচনা-সমালোচনার পর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ঘোষণা করা হয়।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি-

১৯৯৩ সালে চিরস্থায়ী নিম্নে আলোচনা করা হলে বন্দোবস্ত প্রবর্তিত হলেও এর সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত ছিল।

১. দাও-এর মতবাদ-

 কোম্পানি যখন ১৭৬৫ সালে দেওয়ানি লাভ করে তারপর বাংলার চরম অবস্থা উপলব্ধি করে সমস্যা সমাধানের জন্য শাসন সম্পর্কে দুজন পরামর্শদাতার নাম ইতিহাসে খ্যাত। এরা দুজন হলেন আলেকজান্ডার দাও ও হেনরি পেটুলো। আলেকজান্ডার দাও কোম্পানি শাসনকার্য পরিচালনার প্রতি উপহাস করে বলেন যে, নবাবি শাসননীতি ছিল "মধুর চাকের মধু খাওয়া, চাক ধ্বংস করা নয়, কিন্তু ইংরেজরা এর মধু খেয়ে মধুর চাক পর্যন্ত ধ্বংস করে দেয়।" তাই কোম্পানির অত্যাচারী শাসন থেকে বাংলার অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার পিজন্য তিনি ভূমি সংস্কারের পরামর্শ দেন। এতে তিনি বলেন-

  • (ক) বর্তমান বার্ষিক রাজস্ব হার বজায় রেখে সরকার কর্তৃক নগদ সেলামির পরিবর্তে ভূমি চিরস্থায়ীভাবে ব্যক্তিগত মালিকানায় ছেড়ে দেয়া।
  • (খ) একসাথে সমস্ত জমি বিক্রয়জনিত বাজার মূল্য হ্রাস এড়ানোর জন্য সরকার কর্তৃক সমগ্র ভূমির এক-চতুর্থাংশ বিক্রি করে চার বছরে বিক্রয়কার্য সম্পন্ন করা।
  • (গ) বিক্রয়লব্ধ টাকা সরকারি খাতে বিনিয়োগ করে সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধি করা।
  • (ঘ) জমিতে একটানা মালিকানা রোধ করার জন্য ভূমি নিয়ন্ত্রণের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেয়া।দাও এ মত দ্বারা বাংলার ঐতিহ্য ফিরে পাওয়া সম্ভব বলে মনে করতেন।

২. বার্ষিক জমিদারি বন্দোবস্তের কুফল-

ওয়ারেন হেস্টিংসের "আজীবন বন্দোবস্ত" ও ফিলিপ ফ্রান্সিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দুটো বোর্ড অব ডাইরেক্টরে বিবেচনার জন্য প্রেরণ করা হয়। কোর্ট উভয় পরিকল্পনাই আপাতত বর্জন করে এবং আদেশ দেয় যে, পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত সরকারের উচিত বার্ষিক মেয়াদে জমিদারদের সাথে ভূমি বন্দোবস্ত করা। ইজারা প্রথা পরিত্যাগ করে শুধু জমিদারদের সাথে ভূমি বন্দোবস্ত করার জন্য কোর্টের সিদ্ধান্ত ছিল ভূমিতে জমিদারিত্বের স্বীকৃতি। যদিও কোর্ট ফ্রান্সিসের পরিকল্পনাকে একটি অতি প্রশংসনীয় ব্যবস্থা বলে গ্রহণ করে তথাপিও তা কার্যকরী করা সম্ভব হয়নি। কারণ এর পশ্চাতে জানা দরকার- ১. স্থায়ী রাজস্ব ব্যবস্থা কি হওয়া উচিত। ২. গভর্নর জেনারেলের পরিকল্পনাকে পাস কাটিয়ে একজন কাউন্সিলরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের রাজনৈতিক অসুবিধা। তাই এটা কার্যকরী করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে না হলেও অনেকটা অবদান ছিল।

৩. চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জন্য ডাইরেক্টর সভার নির্দেশ-

পীটস ইন্ডিয়া এ্যাক্ট পাস হওয়ার পর বাংলার রাজস্ব সম্পর্কে কোম্পানি নীতি পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। এক্ষেত্রে দেখা যায়, বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত ইন্ডিয়া অফিসে বাংলার ভূমি ব্যবস্থা কি হওয়া উচিত এ নিয়ে এককভাবে চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই। হয়তো যোগ্যতাও নেই। এ ব্যাপারে যারা গভীর চিন্তা করেছিলেন তারা হলেন ফিলিপ ফ্রান্সিস, জন শো'র ও চার্লস স্টুয়ার্ট। এরা সবাই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রবক্তা ছিলেন। এমতাবস্থায় কোর্ট অব ডাইরেক্টরস তাদের সমস্ত পরিকল্পনা, স্মারকপত্র, চিঠিপত্রসমূহ সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, বাংলার জন্য একমাত্র চিরস্থায়ী বন্দোবস্তই কাম্য। ১৭৮৬ সালের ১১ এপ্রিল লেখা পত্রে কলকাতা কর্তৃপক্ষকে এ যুগান্ত কারী সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

৪. জন শো'র ও কর্নওয়ালিস বিতর্ক-

১৭৮৬ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কোর্ট অব ডাইরেক্টরস লর্ড কর্নওয়ালিসকে গভর্নর জেনারেল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কোর্ট চিরস্থায়ী বন্দোবস্তকে কার্যকরী করার জন্য কর্নওয়ালিসকে উপযুক্ত বলে মনে করেন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় কর্নওয়ালিসের/ প্রধান রাজস্ব উপদেষ্টা ও বোর্ড অব রেভিনিউর প্রেসিডেন্ট জন শোর। শোর যুক্তি দেখান যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কার্যকরী করার পূর্বে জানা দরকার।

  • (ক) জমিদার, তালুকদার ও রায়তের বর্তমান আর্থিক অবস্থা।
  • (খ) মুঘল শক্তির অবক্ষয়ের আগে জমিদার ও রায়তের অধিকার।
  • (গ) মুঘল শক্তির পতনের পর্বে রায়তের খাজনা সংক্রান্ত আইন ও রেওয়াজ।
  • (ঘ) দেওয়ানি লাভের পর জমিদার কর্তৃক আরোপিত নতুন আবওয়াব, মামথ ইত্যাদি।
  • (ঙ) সাধারণ রায়তের স্বার্থরক্ষার উপায়।
  • (চ) বর্তমান রাজস্ব ধার্য ব্যবস্থার ত্রুটিসমূহ ও তা দূর করার উপায়।
  • (ছ) ১৭৭২ সাল থেকে প্রত্যেক জমিদারি বিস্তারিত জমা, উশুল ও বাকি হিসেবে সংগ্রহ।

এরপর কর্নওয়ালিস আশা ব্যক্ত করেন যে, এখন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করা হবে। তবে একটু দেরি হয়।

৫. দশসালা বন্দোবস্ত কোর্ট অব ডাইরেক্টরস-

এর নির্দেশনামায় (১২ এপ্রিল, ১৭৮৫) বলা হয়েছিল যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের উদ্দেশ্যে একটি ক্ষণস্থায়ী বন্দোবস্ত করা হয়। কোর্টের অনুমোদন লাভের পর সেই স্বল্পমেয়াদি বন্দোবস্তই চিরস্থায়ী বলে ঘোষণা করা হবে। সে নির্দেশ মোতাবেক গভর্নর জেনারেল ইন কাউন্সিল ১৭৮৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বিহার প্রদেশের জন্য দশসালা বন্দোবস্তের প্রস্তাব করেন। এতে শোর ও কর্নওয়ালিসের মধ্যে বিতর্ক দেখা দেয়। এতে প্রস্তাব ছিল যে, "জমিদারদের সাথে বন্দোবস্ত করা হোক এবং নোটিশ জারি করা হোক যে, কোর্ট অব ডাইরেক্টরস কর্তৃক অনুমোদিত হলে তা চিরস্থায়ী বলে গণ্য হবে এবং দশ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর বন্দোবস্তে কোনো রদবদল হবে না।" এক পর্যায়ে বিতর্ক দেখা দেয় ঘোষণা নিয়ে। শেষে ১৭৮৯ সালে বিহার প্রদেশে দশসালা বন্দোবস্ত প্রবর্তন করা হয়। প্রস্তাবে বলা হয় যে, বাংলা সন ১১৯৭ সালের ১ বৈশাখ থেকে দশ বছরের জন্য জমিদারের সাথে ভূমি বন্দোবস্ত করা হোক। বন্দোবস্তের নাম দেয়া হয় দশসালা।

৬. কৃষি বিপ্লব ও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত-

কর্নওয়ালিস কৃষিক্ষেত্রে কিছুটা উন্নতি সাধন করে। জন শো'র ও কর্নওয়ালিসের বিতর্কের সমস্ত কাগজপত্র জমা দেন। সাথে সাথে দশসালা বন্দোবস্তের দলিলপত্রও জমা দেন। তারপর অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৭৯২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কোর্ট চূড়ান্ত নির্দেশ কর্নওয়ালিসকে জানায়। ১৭৯৩ সালে ২২ মার্চ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ঘোষণা করেন লর্ড কর্নওয়ালিস।

উপসংহার-

 পরিশেষে বলা যায় যে, লর্ড কর্নওয়ালিস প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ছিল ব্রিটিশ ভারতের কোম্পানি শাসনের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর ফলে সুদীর্ঘকাল ধরে ভারতে কোম্পানির রাজস্ব সম্পর্কে জামিদার ও সরকার জমিদার ও রায়ত ইত্যাদি সম্পর্কে যে জটিলতা ছিল তার অবসান হয়। এছাড়া এ বন্দোবস্তের মাধ্যমে প্রশাসনিক কাঠামোর পুনর্বিন্যাস করা হয়। এছাড়া এ বন্দোবস্তের প্রেক্ষাপট তথা পটভূমি ছিল একটি শোষণ ক্ষমতা দখল করার প্রয়াস যা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছিল।

0 টি ভোট
সমাজ সংস্কারে হাজী শরীয়তুল্লাহর অবদান লিখ?

ভূমিকা-

ব্রিটিশশাসিত ভারতে বিশিষ্ট হিন্দু-মুসলিম নেতাদের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি সংস্কারমূলক আন্দোলন গড়ে উঠে। এসব আন্দোলনের মধ্যে সংস্কারমূলক আন্দোলন হিসেবে ফরায়েজি আন্দোলন অন্যতম। এ আন্দোলনের মূল দার্শনিক ভিত্তি হলো একনিষ্ঠভাবে কুরআন শরিফের নির্দেশ পালন করা।

সমাজসংস্কারে ফরায়েজি আন্দোলনের অবদান নিম্নে সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রে ফরায়েজি আন্দোলনের অবদান উল্লেখ করা হলো-

১. কুসংস্কার দূরীকরণ-

সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রে হাজী শরীয়তউল্লাহর ফরায়েজি আন্দোলনের অবদান অপরিসীম। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ইসলাম ধর্মের আদর্শের মানুষকে অনুপ্রাণিত করা এবং কুসংস্কার দূর করা।

২. একেশ্বরবাদ ও সাম্যবাদের আদর্শ প্রতিষ্ঠা-

মুসলমানদের ব্যাপক সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে ফরায়েজি আন্দোলনের মাধ্যমে ইসলামের একেশ্বরবাদ বানানো ও সাম্যবাদের মহান আদর্শ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। সমাধি সৌধ নির্মাণ, মহররমের তাজিয়া বানানো, ওরশ, শিশুর জন্মদিনের উৎসব, বিয়েতে অহেতুক বেশি অর্থের অপচয়, হিন্দুদের পূজাপার্বণে মুসলমান সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ ইত্যাদি কার্যাবলি ইসলামবিরোধী বলে ঘোষণা করেন। মুসলমান সমাজের তিনি আশরাফ আতরাফ প্রথার বিলোপসাধন করেন। ইসলামের মহান আদর্শে বলীয়ান হয়ে অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুসলমান জাতিকে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান করেন।

৩. ধর্মীয় সংস্কার-

ফরায়েজি আন্দোলনের মাধ্যমে মুসলি সমাজে অনুপ্রবেশকারী বিভিন্ন কুসংস্কার, শিরক ও বিদআর মূলোৎপাটন করা হয়। মুসলিম সমাজের প্রচলিত বিভিন্ন কুসংস্কার। রয়েছে। যেমন- কবরপূজা, পিরপূজা, পির মুরিদ ও আশরাফ আতরাফ সম্পর্ক, পিরের দোহাই দেয়া প্রভৃতি। এ আন্দোলনের মূল লক্ষ্যই ছিল মুসলমান সমাজকে কুসংস্কারমুক্ত করে একেশ্বরবাসে। সকলকে উদ্বুদ্ধ করা, যাতে তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনে দেবদেবী, কবরপূজা, সেজদা করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকে।

উপসংহার-

ফরায়েজি আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি ইংরেজ, নীলকর, জমিদার গোষ্ঠীর অত্যাচার প্রতিরোধ ও বৈষম্য দূর করার প্রচেষ্টা চালান। ইংরেজদের শাসনের অবসান ও মুসলমানদের রাজনৈতিক কর্তত্ব প্রতিষ্ঠা করাই ছিল এ আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য। ফরায়েজি আন্দোলন বাঙালির ইতিহাস কেবল ধর্মসংস্কার আন্দোলন কিংবা রাজনৈতির সংগ্রামই নয়, এটি সরাসরি সমগ্র জনগণকে আত্মসচেতনতাবোধ জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে পরিচালিত করা হয়েছিল।

0 টি ভোট
আলীগড় আন্দোলনের অবদান সম্পর্কে যা জান বিস্তারিত আলোচনা করো?

ভূমিকা-

 ব্রিটিশ শাসিত ভারতীয় উপমহাদেশে যেসব মনীষী পশ্চাৎপদ মুসলমানদের অজ্ঞতা, অশিক্ষা, সামাজিক শোষণ, রাজনৈতিক বঞ্চনা এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের মধ্যে স্যার সৈয়দ আহমদ অন্যতম। তিনি তৎকালীন ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের নবজাগৃতির অন্যতম পথনির্দেশক ছিলেন। তাঁর পরিচালিত উত্তর ভারতের আলীগড়ভিত্তিক সংস্কার আন্দোলন ইতিহাসে আলীগড় আন্দোলন নামে পরিচিত। স্যার সৈয়দ আহমদ ভারতীয়। উপমহাদেশে মুসলমানদের সামাজিক শোষণ, রাজনৈতিক বঞ্চনা এবং অর্থনৈতিক দুর্দশা মোকাবিলা করে অধঃপতিত মুসলমানদের মর্যাদা সহকারে সমাজে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে আলীগড় আন্দোলন গড়ে তোলেন। এটি ছিল প্রত্যক্ষ সংগ্রামের পরিবর্তে ব্রিটিশ শাসনের সঙ্গে সহযোগিতাধর্মী সম্পর্ক স্থাপনের সংস্কার আন্দোলন। মুসলিম স্বার্থ সংরক্ষণে আলীগড় আন্দোলন গড়ে তোলা হয়েছিল।

আলীগড় আন্দোলনের অবদান স্যার সৈয়দ আহমদ খান পরিচালিত আলীগড় আন্দোলন উপমহাদেশের মুসলমানদের জ্ঞানবিজ্ঞান ও যোগ্যতা অর্জনে উৎসাহিত করে। যা পরবর্তীতে মুসলমানদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সুদূরপ্রসারী অবদান রাখতে সক্ষম হয়। নিম্নে মুসলিম স্বার্থ সংরক্ষণে আলীগড় আন্দোলনের অবদান বর্ণনা করা হলো-

মোহামেডান এ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।এ কলেজটি পরবর্তীতে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।

১. শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান-

 শিক্ষাক্ষেত্রে মুসলমানদের উন্নতিস উপমহাদেশে মুসলমানদের জ্ঞানবিজ্ঞানের উৎকর্ষতা সাধনের জন এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কার্যকর অবদান রেখে চলেছে। যার সুফল আজকের মুসলমানরা প্রত্যক্ষভাবে ভোগ করছে। এ প্রসঙ্গে বল হয়েছে, The college was much more than a seat of learning, it soon became the centre of the politic

অর্থাৎ, এ কলেজটি জ্ঞানের অনেকগুলো শাখায় বিভক্ত ছিল। এটি ক্রমান্বয়ে ভারতীয় মুসলমানদের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল।

২. আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞানে মুসলমানদের উদ্বুদ্ধকরণ-

ইংরেজ সরকার মুসলমানদের কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে সম্মত ছিল না বিশেষ করে তারা হিন্দুদের তুলনায় ইংরেজি ও বিজ্ঞান চর্চায় পিছিয়ে ছিল। আলীগড় আন্দোলনের মাধ্যমে স্যার সৈয়দ আহমদ মুসলমানদেরকে ইংরেজ সরকারের সহযোগিত নিয়ে এসব সুযোগ-সুবিধা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেন। এজন্য তিমি তাহজিব-উল-আখলাক নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। যাতে মুসলমানরা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুযোগ পেতে পারে এবং পাশ্চাত্যের সাহিত্য ও বিজ্ঞান রপ্ত করতে পারে। এ আন্দোলনের পটভূমিতে মুসলমানদের জ্ঞানবিজ্ঞানে পশ্চাৎপদতার কারণ স্যার সৈয়দ আহমদ খান চিহ্নিত করেন-

  • (ক) সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষার অভাব।
  • (খ) নতুন শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষার অভাব
  • (গ) অপরাধ বা অনৈতিকতা এবং মুসলিম ধ্যান-ধারণা ও আচরণের অভাব।
  • (ঘ) মুসলমানদের মধ্যে কুসংস্কার।
  • (ঙ) সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষাগত ত্রুটি।
  • (চ) মুসলমানদের ব্যবহার, অভ্যাস, প্রথাগত ত্রুটি।

এসব ত্রুটি অনুসন্ধান করে স্যার সৈয়দ আহমদ স্পষ্টভাবে বলেন যে, প্রচলিত সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা কোনোভাবে মুসলমানদের চাহিদা পূরণ করতে পারে না। এ আন্দোলনের মাধ্যমে ইংরেজ সরকারের প্রতি আনুগত্যশীল হয়ে মুসলমানদের। উন্নতির পথ প্রশস্ত করার লক্ষ্যে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে ইংরেজি বইগুলো উর্দু ভাষায় রূপান্তর করে মুসলমানদের জ্ঞানবিজ্ঞানে সমৃদ্ধশালী করতে সাহায্য করেন।ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সাহায্য করে এসেছে।

৩. মুসলমানদের একতাবদ্ধকরণ-

ভারতীয় মুসলমানদের ইসলামি যাতে মুসলমানরা তাদের সমস্যাগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে সমাধা করতে পারে। এক্ষেত্রে স্যার সৈয়দ আহমেদের দু'ধরনের আহ্বান ছিল-

প্রথমত, মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি।লেখাপড়া করুক এবং বসবাস করুক তাদের মধ্যে পরস্পর দ্বিতীয়ত, মুসলিম পরিবারের ছেলেমেয়েরা যে যেখানে সহনশীলতার অনুভূতির জন্ম দেয়া।

৪. পাশ্চাত্য জ্ঞানবিজ্ঞানের সাথে পরিচিতিকরণ-

আলীগড় আন্দোলন ভারতবর্ষের মুসলিম জাতি সত্তার বিকাশে নিয়োজিত ছিল। বিশেষ করে অনুবাদ সমিতি যা পরবর্তীতে আলীগড় বিজ্ঞান সমিতি নামকরণ হয়। স্যার সৈয়দ আহমদ সমিতিতে তাঁর বন্ধু ও ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের কাজ করার জন্য আহ্বান জানান এবং পশ্চিমা দেশের বই পুস্তক উর্দু ভাষায় অনুবাদ করে ভারতের মুসলমানদের কলা, বিজ্ঞান আইন ও সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি তার বিজ্ঞান সমিতিতে বলেন, আমি লক্ষ্য করি যে, আমাদের অতীত ইতিহাস অজ্ঞতার এবং এ জাতির এমন কোনো নির্দেশনা নেই যা তাদেরকে ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গঠনে সাহায্য করতে পারে। এ সমিতিতে কর্নেল গ্রাহাম উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতো এবং ইংরেজি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতো এবং তার সহযোগিতায় স্যার সৈয়দ আহমদ একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। যা পরবর্তীতে ভিক্টোরিয়া কলেজে রূপান্তর হয়।

ভারতীয় মুসলমানদের জ্ঞানবিজ্ঞান বিকাশের স্বার্থে ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় তিনি সাপ্তাহিক আলীগড় গেজেট নামে পত্রিকা প্রকাশ করেন। এটি সাপ্তাহিক হলেও সপ্তাহে দু'সংখ্যা প্রকাশিত হতো। মুসলমানদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন করার ক্ষেত্রে এ পত্রিকার অবদান ছিল এবং যে সময় স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সাংবিধানিক সংকট উত্তরণের জন্য এ ধরনের উদ্যোগ অপরিহার্য ছিল।

৫. মুসলিম জাতিসত্তার বিকাশ-

আলীগড় আন্দোলন ভারত উপমহাদেশের মুসলিম পুনর্জাগরণের সূত্রপাত ঘটায়। মুসলমানরা যেভাবে জ্ঞানবিজ্ঞানে পশ্চাৎপদ ছিল তা থেকে মুক্ত জ্ঞান চর্চায় এবং তৎকালীন পাশ্চাত্য জগতের জ্ঞানবিজ্ঞানের সাথে পরিচিতি করণে আলীগড় আন্দোলন যে অবদান রাখে তার সূত্র ধরে দুইটি ক্ষেত্রে মুসলমানদের অগ্রগতি সাধিত হয়।

প্রথমত, শাসক এবং শাসিতদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি দূর করে একটি বিশ্বস্ত পরিবেশ তৈরি করা "To remove distrust and achieve understanding between the rulers and the ruled (Muslims).

দ্বিতীয়ত, মুসলমানদের অধঃপতন এবং স্থবিরতা থেকে জাগ্রত করা "To arouse the muslims from downfall and stagnation."

মুসলমানরা এ আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষা সংস্কৃতির বিকাশ, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অধিকার আদায়ে সোচ্চার এবং ইংরেজদের সাথে ভুল বুঝাবুঝি দূর করতে অনেকাংশে সফল হয়।

উপসংহার-

পরিশেষে বলা যায় যে, এ আন্দোলন মুসলমানদের উন্নয়ন ও সংগঠিত হবার এক আন্দোলন। যদিও এ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব স্যার সৈয়দ আহমদকে আধুনিক শিক্ষা প্রবর্তনের কারণে গোঁড়া মুসলিমরা তাকে কাফির হিসেবে অভিহিত করে কিন্তু শত বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও স্যার সৈয়দ আহমদ ও তাঁর সহযোগীদের উদ্যোগ ব্যাহত হয়নি। এ আন্দোলন মুসলিম সমাজের কুসংস্কারের পরিবর্তে মুক্ত চিন্তার অনুপ্রবেশ ঘটায়। এজন্য এ আন্দোলন প্রসঙ্গে বলা হয়, "Aligarh Movement opened the door of modern education for Indian Muslims and brought about a new awakening among them." অর্থাৎ আলীগড় আন্দোলন ভারতীয় মুসলমানদের জন্য আধুনিক শিক্ষার দ্বার উন্মোচন করে এবং তাদেরকে নতুনভাবে জাগ্রত করতে সাহায্য করে।

0 টি ভোট
হাজী শরীয়ত উল্লাহর ফরায়েজি আন্দোলনের কার্যক্রম ও প্রভাব আলোচনা করো?

ভূমিকা-

বর্তমান সমাজকল্যাণের অনেক কিছুই অতীতের সমাজ সংস্কারকদের সাধনা ও প্রচেষ্টার ফল। সমাজকল্যাণের সাথে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয় হিসেবে সমাজ সংস্কার চিহ্নিত। ফরায়েজি আন্দোলন সমাজ সংস্কারে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য, রাজনৈতিক শাসন-বঞ্চনার বিরুদ্ধে হাজী শরীয়ত উল্লাহর নেতৃত্বে ফরায়েজি আন্দোলন পরিচালিত হয়। ফরায়েজি আন্দোলনের মূল দর্শন ছিল মূলত মুসলমানদেরকে তাদের ধর্মীয় মূলনীতি অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। হাজী শরীয়ত উল্লাহর মৃত্যুর পর দুদু মিয়া এ আন্দোলন পরিচালিত করেন।

ফরায়েজি আন্দোলনের কার্যক্রম নিয়ে ফরায়েজি আন্দোলনের কার্যক্রমসমূহ বর্ণনা করা হলো-

১. ইসলামি আদর্শ প্রতিষ্ঠা-

ইসলাম মুসলমানদের পবিত্র ধর্ম।আর এ ধর্মের অনুসরণের মাধ্যমেই মানবতার কল্যাণ ও মুক্তি নিহিত। তাই মুসলমানদেরকে হাজী শরীয়ত উল্লাহ কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে জীবন পরিচালনার পথে উদ্বুদ্ধ করতো। এ আন্দোলনের একমাত্র লক্ষ্যই ছিল মুসলিম সমাজকে কুসংস্কার মুক্ত করে একেশ্বরবাদে উদ্বুদ্ধ করে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো দেব-দেবির পূজা, কবর পূজা, সেজদা করা প্রভৃতিকে হারাম ঘোষণা করা।

২. কুসংস্কার দূরীকরণ-

মুসলমান সমাজে যে সকল কুসংস্কার, শিরক ও বিদআত অনুপ্রবেশ করেছিল তা দূর করার লক্ষ্যেই এ আন্দোলন পরিচালিত হয়। ইসলামি নিয়মবহির্ভূত পির পূজা, পুষ্প অর্পণ, ওরশ পালন, জন্ম, বিয়ে, মৃত্যুতে অযথা অপচয় ইত্যাদি কুসংস্কার দূর করার চেষ্টা করা হয়। ফরায়েজি আন্দোলনের মাধ্যমে পির মুরিদ উপাধি বিলোপের চেষ্টা করা হয়। কারণ এর ফলে পিরের ওপর, মুরিদ নির্ভরশীল হয়ে পরনির্ভর ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়। ফলে তারা অন্যায়-অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সক্ষম হয় না এবং ন্যায্য অধিকার আদায় সম্পর্কে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠতে পারে না। হযরত ইমাম হাসান-হোসেনের মৃত্যু দিবসে অযথা হৈচৈ, উঁচু সমাধি নির্মাণ, আলোকসজ্জা, আশরাফ-আতরাফ সম্পর্ক পরিহারের জন্য তিনি উদাত্ত আহ্বান জানান।

৩. বৈষম্য দূরীকরণ-

হাজী শরীয়ত উল্লাহ মনে করতেন, "বংশের পরিচয় বড় নয়, কর্মই হলো মানুষের মূল্যায়নের মাপকাঠি।" মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সুতরাং তারা অন্যের অন্যায় শোষণ মেনে নিতে পারে না। তাই ফরায়েজি আন্দোলনের মাধ্যমে ইংরেজ নীলকর ও জমিদারের অন্যায় শোষণের বিরুদ্ধে এবং সামাজিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে মুসলমানদেরকে উদ্বুদ্ধ করেন। সেই সঙ্গে তিনি আর্থসামাজিক বৈষম্য দূরীকরণের জন্য প্রচেষ্টা চালান।

৪. "দারুল হরব" ঘোষণা-

প্রখ্যাত মনিষী হাজী শরীয়ত উল্লাহ ব্রিটিশ শাসিত ভারতকে 'দারুল হরব' বা শত্রুকবলিত দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং তিনি ঈদ ও জুমার নামায আদায় নিষিদ্ধ করেন। মুসলমানদেরকে ব্যাপক সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে ফরায়েজি আন্দোলনের মাধ্যমে একেশ্বরবাদের প্রতি এবং সাম্রাজ্যবাদের মহান আদর্শ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান। আর ইংরেজদের কবল থেকে স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করে 'দারুল ইসলাম' প্রতিষ্ঠান দুর্বার আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানান।

৫. বিদ্রোহ ঘোষণা-

 ধর্মীয় সংস্কার ও গোঁড়ামি দূরীকরণের ক্রমশ সামাজিক সংস্কার আন্দোলনে রূপ নেয়। ব্রিটিশ সরকারের শাসন ও শোষণ এবং ব্রিটিশ সরকার সৃষ্ট নরপশু জমিদার ও সুদখোর মহাজনদের অত্যাচার ও উৎপীড়নের হাত থেকে শ্রমজীবী মানুষকে রক্ষা করার জন্য আন্দোলনকে আরো তীব্রতর করে তোলেন। আর ফরায়েজি আন্দোলনে শরিক হয়ে এই অসহায় শ্রেণি জমিদার, মহাজন ও নীলকর বণিকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রেরণা পায়। তারা আত্মপ্রত্যয়ী হওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করে।

উপসংহার-

পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটিশ শোষণের বিরুদ্ধে যে সকল মনীষী তাদের আন্দোলন করেন তাঁর মধ্যে হাজী শরীয়ত উল্লাহ অন্যতম। তার নেতৃত্বে ভারতীয় উপমহাদেশে নীলকরদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছিল। মুসলিম সমাজের বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, কুসংস্কার দূর করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এছাড়া সামাজিক, ধর্মীয় গোঁড়ামি দূর করতে ফরায়েজি আন্দোলন অভূতপূর্ব ভূমিকা রাখে। নীলবিদ্রোহ করে মুসলমান তথা বাংলার জনগণের অধিকার রক্ষায় এ আন্দোলন ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করে।

0 টি ভোট
মুসলমানদের শিক্ষা ক্ষেত্রে আলীগড় আন্দোলনের অবদান আলোচনা করো?

ভূমিকা-

 ব্রিটিশ ভারতে যেসব আন্দোলন সমাজসেবার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এর মধ্যে শিক্ষিত করে কুসংস্কারমুক্ত করার মানসে এ আন্দোলন গড়ে করেন স্যার সৈয়দ আহমদ খান। তিনি মুসলমানদের তোলেন। স্যার সৈয়দ আহমদ খান তার সমস্ত জীবন প্রধানত মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষা দীক্ষার বিস্তার সাধনেই ব্যয় করেন।

  • আলীগড় আন্দোলন-

ব্রিটিশ শাসিত ভারতে অধঃপতিত মুসলমানদেরকে কুসংস্কারমুক্ত করে আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের জন্য স্যার সৈয়দ আহমদ খান যে জাগরণ সৃষ্টি করেছিলেন ইতিহাসে তাই 'আলীগড় আন্দোলন' নামে পরিচিত।

শিক্ষা সংস্কারে আলীগড় আন্দোলনের অবদান অবিভক্ত, ভারতবর্ষে মুসলমানদের শিক্ষাক্ষেত্রে উৎকর্ষ সাধনের জন্য আলীগড় আন্দোলনের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। নিম্নে শিক্ষা ক্ষেত্রে আলীগড় আন্দোলনের অবদান তুলে ধরা হলো-

১. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ-

মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার বাস্তব আলো পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্যার সৈয়দ আহমদ খান অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ১৮৭৫৯ সালে মুরাদাবাদে নির্মিত স্কুল, ১৯৬৩ সালে গাজীপুরে নির্মিত স্কুল এবং ১৮৭৪ সালে আলীগড়ে স্থাপিত বিশ্ববিখ্যাত 'মোহামেডান অংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ' প্রভৃতি। এ আলীগড় কলেজকে কেন্দ্র করেই তার সকল সামাজিক আন্দোলন পরিচালিত হতো।

২. গ্রন্থ ও প্রবন্ধ প্রকাশ-

 স্যার সৈয়দ আহমদ খান তার স্বজাতিকে সচেতন করে তোলার জন্য এ সময় বিভিন্ন গ্রন্থ ও প্রবন্ধ লেখা শুরু করেন। সিপাহী বিপ্লবের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি ১৯৫৯ সালে উর্দু ভাষায় রচনা করেন 'আমহাব-ই-বাগওয়াতে হিন্দু নামক গ্রন্থ। উপরন্তু তিনি Thajib-al-Akhlaq পত্রিকায় বিভিন্ন প্রবন্ধ লিখে মুসলমানদের মধ্যে এই বিশ্বাস উদয়াটনের চেষ্টা করেন যে, পাশ্চাত্য চিন্তাধা রা বা জ্ঞানবিজ্ঞান ইসলামবিরোধী নয়।

৩. বিজ্ঞান সমিতি প্রতিষ্ঠা-

স্যার সৈয়দ আহমদ মুসলমানদের বিজ্ঞানমনস্ক করার জন্য ১৮৬৩ সালে গাজীপুরে বিজ্ঞান সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে এটি আলীগড়ে স্থানান্তরিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল কোনো বিজ্ঞান আলোচনা, প্রচার পাশ্চাত্য শিক্ষা সম্প্রসারণ, বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ প্রকাশ।

৪. অনুবাদ সমিতি প্রতিষ্ঠা-

বৈজ্ঞানিক গ্রন্থাবলি, ইতিহাস, সাহিত্য, কৃষি, ধর্ম প্রভৃতি গ্রন্থসমূহ অনুবাদ করে মুসলমানদের সহজবোধ ও সহজপাঠ্য করার জন্য তিনি ১৮৬৪ সালে একটি অনুবাদ সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে এটি সাহিত্য ও বিজ্ঞান সমিতি নামে অভিহিত হয়। এ সমিতির মাধ্যমে কুসংস্কারে নিমজ্জিত মুসলমানদেরকে আত্মসচেতন করে গড়ে তোলার প্রয়াস চালানো হয়।

৫. শিক্ষা কমিটি গঠন-

শিক্ষা লাভ করা জনগণের ন্যায্য অধিকার এ ধারণাকে বাস্তবায়ন করার জন্য স্যার সৈয়দ আহমদ খান ১৮৬৪ সালে উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলীয় জেলাগুলোতে শিক্ষা কমিটি গঠন করেন।

৬. ইসলামি শিক্ষার উন্নয়ন-

 জ্ঞানবিজ্ঞানের পাশাপাশি মুসলমানদেরকে ইসলামি অনুশাসন শিক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি গাজীপুরে ১৮৮৬ সালে ৬ মাদরাসাতুল উলুম প্রতিষ্ঠা করেন।

৭. সাময়িক পত্রিকা প্রকাশ-

মুসলমানদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করার জন্য ১৮৬৬ সালে বিজ্ঞান সমিতির পক্ষ থেকে আলীগড় ইনস্টিটিউট গেজেট নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করা হয়। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল একই কলাম উর্দু ও ইংরেজিতে প্রকাশ যাতে করে ভারতবাসী ও ইংরেজগণ প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবগত হতে পারে এবং উভয়ের সম্পর্কের উন্নতি ঘটে।

উপসংহার-

পরিশেষে বলা যায় যে, আলীগড় আন্দোলনের প্রবক্তা স্যার সৈয়দ আহমদ খান ছিলেন শিক্ষা ও সমাজসংস্কারকের অন্যতম সেরা কারিগর। মুসলমানদেরকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তিনি এক নব জাগরণের সৃষ্টি করেন।

0 টি ভোট
সংস্কার আন্দোলন হিসেবে আলীগড় আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য উল্লেখ করো?

ভূমিকা- 

অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতাব্দীতে অবিভক্ত ভারতে যেসব সংস্কার আন্দোলন মুসলমানদেরকে অজ্ঞতা, কুসংস্কার, অশিক্ষা, আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগঠিত করে তোলে তার মধ্যে স্যার সৈয়দ আহমদ পরিচালিত আলীগড় আন্দোলন ছিল অন্যতম। সমাজসেবা ও সমাজ সংস্কারে মহান ব্রততে স্যার সৈয়দ আহাম্মদ খানের গতিময় নেতৃত্বে আলীগড় আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে এবং চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। ব্রিটিশ শাসকগণ ক্ষমতা দখলের পর ভারতীয় মুসলমানদের অবস্থা দুর্বিসহ হয়ে উঠে। মুসলমানগণ স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন ও ব্রিটিশদের অসহযোগিতার কারণে ব্রিটিশদের নিকট শত্রু বলে বিবেচিত হয় এবং তাদের ধর্ম, শিক্ষা, সম্পদ সবকিছুই ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার উপক্রম হয়। স্যার সৈয়দ আহমদ ঐ সকল সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত মুসলমানদেরকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির জন্য শুরু করেন আন্দোলন যা আলীগড় আন্দোলন নামে পরিচিত।

আলীগড় আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য-

মুসলমানদের পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার লক্ষ্যে এ আন্দোলন শুরু হলেও তা পরবর্তীতে বহুমুখী উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। উদ্দেশ্যগুলো নিম্নরূপ-

  • ১. মুসলমান সমাজে বিদ্যমান গোঁড়ামি, অজ্ঞতা, কুসংস্কার প্রভৃতি দূরীকরণ এবং সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে মুসলমানদের হৃত গৌরব ও ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার।মুসলমান সম্পর্ক উন্নয়ন আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞানের সাথে পরিচিত।
  •  ২. পিছিয়ে পড়া মুসলমানদেরকে উদ্বুদ্ধকরণ ও ইংরেজ হয়ে দক্ষ ও শক্তিশালী জাতি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ইংরেজি শিক্ষা ও পাশ্চাত্য ভাবধারায় শিক্ষিত করে তোলা।
  • ৩. হিন্দু জাতীয় কংগ্রেসের পাশাপাশি মুসলিম স্বার্থ রক্ষায় কর্মসূচি গ্রহণ করা।
  • ৪. ব্রিটিশ সরকারের আস্থা অর্জন।
  • ৫. ব্রিটিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন উচ্চ পদে মুসলমানদেরকে নিয়োগ দান।

আলীগড় আন্দোলনের কার্যক্রমসমূহ-

আলীগড় আন্দোলনকে সফল করার জন্য স্যার সৈয়দ আহমদ ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। আলীগড় আন্দোলনের ক্ষেত্রে গৃহীত কার্যক্রমগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো-

১. বই প্রকাশনা-

 আন্দোলনের প্রারম্ভে স্যার সৈয়দ আহমদ কতিপয় প্রসিদ্ধ গ্রন্থ রচনা করেন। ১৮৫৯ সালে তিনি শিল্পবিপ্লবের কারণ ও ঘটনাবলি যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করে "আলবান ই-ভাগাওয়াত হিন্দ" (উর্দু) শীর্ষক গ্রন্থ রচনা করেন। এটি ১৮৭৩ সালে ২য় সংস্করণ ইংরেজিতে প্রকাশপূর্বক এক কপি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রত্যেক সদস্যের নিকট প্রেরণ করেন। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক William Hunter মুসলমান জনগণের দুঃখ-দুর্দশা ও ব্রিটিশ সরকারের নিপীড়নের কথা তাঁর "Indian Mussalmans" গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন। সরকার, জনগণ, শাসক ও শাসিতদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটানোর জন্য স্যার সৈয়দ আহমদ "The Loyal Mohammedans of India" নামক গ্রন্থে মুসলমানদের দোষ-ত্রুটির কথা উল্লেখ করে প্রকাশ করেন যা সকলের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরী সম্পাদনা করেন। ১৮৫৮ সালে "সিপাহী বিদ্রোহের কারণ" বইটি প্রকাশ করেন। এছাড়া শাসক ও শাসিত উভয়কে শিক্ষা দেয়ার জন্য এবং সম্ভাব্য সংঘাত ও ভুল বুঝাবুঝির কারণ দূর করতে সচেষ্ট হন। যার ফলশ্রুতি হিসেবে ভারতে বিদ্রোহের কারণ শীর্ষক পুস্তিকাও প্রকাশ করেন।

২. অনুবাদ সমিতি প্রতিষ্ঠা-

মুসলমানদেরকে পাশ্চাত্য শিক্ষার সাথে পরিচিত করানোর জন্য স্যার সৈয়দ আহমদ খান ১৮৫৩ সালে প্রথমে একটি বিজ্ঞান সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে এটি আলীগড়ে স্থানান্তরিত হয়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল জ্ঞানবিজ্ঞান, আলোচনা, প্রচার নিজেদের ঐতিহ্যবাহী গ্রন্থগুলো ইংরেজিতে এবং ইংরেজদের মধ্যে মেলামেশা ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান এবং ভাব বিনিময় করা। দেশিয় ভাষায় ভূগোল আধুনিক কলা ও বিজ্ঞান সম্পর্কিত কোনো উপযুক্ত বই ছিল না। তাই এ অনুবাদ কেন্দ্রের মাধ্যমে পাশ্চাত্য বিষয়ক গ্রন্থাবলি অনুবাদের ব্যবস্থা করা হয়। এ অনুবাদ সমিতি পরবর্তীতে "সাহিত্য ও বিজ্ঞান সমিতি" নামে পরিচিতি লাভ করে।

৩. পত্রিকা প্রকাশ-

পত্রিকা প্রকাশ করে জনসাধারণকে সচেতন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ১৮৬৬ সালে বিজ্ঞান সমিতির পক্ষ থেকে "আলীগড় ইনস্টিটিউট গেজেট" নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের হয়। ১৮৭০ সালে স্যার সৈয়দ আহমদ খান মুসলিম সমাজের রীতিনীতি সংস্কারের জন্য "তাহজিবুল আখলাক" নামে উর্দু ভাষায় একটি পত্রিকা বের করেন। এর মূল উদ্দেশ্য হলো ভারতবাসী ও ইংরেজগণ যাতে প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবগত হয়ে উভয়ের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়। এছাড়াও সামাজিক অবনতির কারণ ও সমাধান ব্যাখ্যা করেন। ১৮৬৪ সালে "The Mohammedan Social Reformer" নামক পত্রিকায় প্রবন্ধ রচনা করেন এবং তাতে জনগণের মধ্যে শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবনের উপাদান সমৃদ্ধ করা হয়। সৈয়দ আহমদ লক্ষ্য করেন যে, তার স্বধর্মীয় মুসলমানদের শিক্ষাদীক্ষা যুগের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল। আর এজন্য তিনি বলেন যে, শিক্ষা দাও, শিক্ষা দাও, শিক্ষা দাও তাহলে এ ব্যবস্থায় একদিন ভারতে সমস্ত রাজনৈতিক সামাজিক ব্যাধি দূর করতে পারে। মূল ভালো কর তাহলে বৃক্ষ সুশোভিত হবে।

৪. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন-

শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য স্যার সৈয়দ আহমদ ১৮৭৫ সালে আলীগড়ে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৭৭ সালে এটি "মোহামেডান এ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজে” উন্নীত হয় এবং পরে ১৯২০ সালে এটি "মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়" নাম ধারণ করে। এছাড়া তিনি গাজীপুরে একটি ইংরেজি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন যা পরবর্তীতে কলেজে রূপান্তরিত হয়। জনগণের শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৮৬৪ সালে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাসমূহের জন্য একটি শিক্ষা কমিটি স্থাপন করেন।

৫. মোহামেডান এ্যাডুকেশন কংগ্রেস-

মুসলমানদের শিক্ষা, সংস্কার, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়ন সাধনের লক্ষ্যে ১৮৮৬ সালে মোহামেডান এডুকেশন কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। এর নাম পরিবর্তন করে ১৮৯০ সালে "Mohammedan Educational Conference" রাখা হয়। এর মাধ্যমে আলীগড়ের বার্তা জনগণের নিকট পৌঁছে দেয়া হয়। এতে জ্ঞানবিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন প্রভৃতি প্রচারিত হয় এবং মুসলমানদের মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গিতে যুগোপযোগী পরিবর্তন সাধিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই আলীগড় আন্দোলন সুসংগঠিত হয় এবং সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে।

৬. ব্রিটিশ ভারত সমিতি-

ব্রিটিশ শাসকদের নিকট থেকে সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে এবং ব্রিটিশ ও মুসলমানদের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য ১৮৬৬ সালে "ব্রিটিশ ভারত সমিতি" গঠন করা হয়। এ সমিতির মাধ্যমে বঞ্চিত মুসলমানগণ তাদের দাবি-দাওয়া ব্রিটিশদের নিকট পেশ করেন। তবে এ সমিতি মাত্র এক বছর স্থায়ী হয়। তদুপরি কেউ কেউ এই এসোসিয়েশনকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের পথিকৃৎ বলে মনে করেন।

৭. মূল্যায়ন-

স্যার সৈয়দ আহমদ খান সদাসর্বদা নিজের কল্যাণের চেয়ে সমাজের মঙ্গল কামনা করতেন অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে। তিনি এমন একটি শিক্ষিত সম্প্রদায় গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, যারা জ্ঞান ও বুদ্ধিতে অপর সমাজের বিদগ্ধজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। যাদের উপর নির্ভর করবে জাতির ভবিষ্যৎ এবং হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের গুরুদায়িত্ব। মুসলমানদের প্রকৃত অবস্থা পর্যালোচনা করে সঠিক দিক আবিষ্কার করা হলো আলীগড় আন্দোলনের প্রধান কাজ। আলীগড় আন্দোলনের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড মুসলিম মানসে এক নতুন ধ্যান-ধারণা ও কর্ম অভিজ্ঞতা সঞ্চারিত করে এক নবযুগের সূচনা করে।

সমকালীন সমাজের প্রেক্ষাপটে আলীগড় আন্দোলনের প্রভাব-

অধিকার বঞ্চিত ও হতাশাগ্রস্ত মুসলমানদের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে। নিম্নে আলীগড় আন্দোলনের কতিপয় প্রভাব আলোচনা করা হলো-

১. মুসলিম জাতীয়তার উন্মেষ- 

আলীগড় আন্দোলনই মুসলমানদের অংশ গ্রহণে অনুপ্রাণিত করে। মুসলমানদের পৃথক ও একক স্বাধীনতা ও স্বাধীন সত্তা লাভের পটভূমি রচনা করেছিল।

 ২. মুসলমানদের মধ্যে নবজাগরণ সৃষ্টি-

আলীগড় আন্দোলনের কারণে অনেক মুসলিম মনীষী সমাজে নবজাগরণের সচেষ্ট হন। এদের মৌলভী চেরাগ আলী, সৈয়দ আমীর আলী, বদরুদ্দীন তায়েবজীর নাম উল্লেখযোগ্য। নওয়ার আব্দুল লতিফের মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটি, সৈয়দ আমীর আলীর সেন্ট্রাল মোহামেডান এবং বদরুদ্দীন তায়েবজীর আনজুমান-ই-ইসলাম মুসলমানদের পুনর্জাগরণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।

৩. রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি-

আলীগড় আন্দোলনের মাধ্যমে উদারবাদী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ আহমদ কতিপয় বাস্তবমুখী ও সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এতে ইংরেজ-মুসলিম ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয় এবং ইংরেজ-মুসলিম বৈপরীত্যের পরিবর্তে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে।

৪. সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি-

এর মধ্যেমে মুসলমানদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণের আগ্রহ সৃষ্টি হয়। ফলে তারা ইংরেজি প্রশাসনের সহযোগিতা ও সামঞ্জস্যতা বিধানের মাধ্যমে সমাজে পুনপ্রতিষ্ঠিত হয়। আলীগড় আন্দোলনের মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি হয়।

৫. শিক্ষিত মধ্যবিত্ত মুসলিম শ্রেণি সৃষ্টি-

স্যার সৈয়দ আহমদ বোঝাতে পেরেছিলেন যে, শিক্ষাক্ষেত্রে মুসলমানরা যতোদিন হিন্দু সম্প্রদায়ের সমক্ষক না হবে ততোদিন পর্যন্ত তাদের দুর্দশা দূর হবে না। তার প্রচেষ্টার ফলে মুসলমানরা পাশ্চাত্য শিক্ষার সংস্পর্শে আসতে সক্ষম হয়। তিনি উপমহাদেশের নগরবাসী মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে তুলতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন।

৬. সহযোগিতামূলক রাজনৈতিক ধারা প্রবর্তন-

১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবোত্তর মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার স্বার্থে সৈয়দ আহমদ রাজানুগত্য প্রদর্শন করেন। কারণ অধঃপতিত ও হতাশাগ্রস্ত মুসলমানদের সিপাহী বিদ্রোহের পর যেভাবে ইংরেজ রাজশক্তির আক্রোশ ও নির্মম অত্যাচারের শিকার হয়েছিল। তাতে ভারতবর্ষে একটি জাতিগোষ্ঠী হিসেবে মুসলমানদের বেঁচে থাকা দায় হয়ে ওঠে। 

৭. সম্পর্ক উন্নয়ন ও অধিকার অর্জন-

 আলীগড় আন্দোলনের ফলেই মুসলমানরা ইংরেজদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে। তাদের সকল প্রকার ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটে। আলীগড় আন্দোলনের ফলে মুসলমানরা তাদের অধিকার আদায়ে সক্ষম হয়।

৮. শিক্ষাবিস্তার-

 আলীগড় আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে। মুসলমানরা ইংরেজ ও অন্যান্য আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞান, সাহিত্য দর্শন প্রভৃতি অধ্যয়ন শুরু করে। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে মুসলমানরা ব্যাপক উন্নতি সাধন করে। ফলে তাদের স্বাধীনতা রক্ষিত হয়।

৯. সমাজ সংস্কার-

 রাজ্যহারা মুসলমান জাতি ইংরেজদের প্রতি বিদ্বেষ মনোভাব নিয়ে এবং ধর্মীয় গোঁড়ামি, সামাজিক কুসংস্কার ও সংকীর্ণ মানসিকতা নিয়ে সমাজে অবাঞ্ছিতভাবে বসবাস করতো। আলীগড় আন্দোলনের মাধ্যমে এসব দূর করা হয়।

১০. শিক্ষা বিস্তার-

আলীগড় আন্দোলনের ফলে মুসলমানরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে চাকরিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে হিন্দুদের সক্ষমতা অর্জন করে।

১১. হারানো গৌরব উদ্ধার-

আলীগড় আন্দোলনের মাধ্যমে মুসলমানরা আন্দোলনের মাধ্যমে উদারবাদী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ আহমদ কতিপয় বাস্তবমুখী ও সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ নেন।

উপসংহার-

 পরিশেষে বলা যায় যে, স্যার সৈয়দ আহমদ খানের জীবনব্যাপী সাধনার ফল এ আলীগড় আন্দোলন। মুসলমান সমাজকে অন্ধ অশিক্ষার গহ্বার থেকে মুক্ত করে জানের উজ্জ্বল আলোকে আনয়ন করাই ছিল তাঁর জীবনের ব্রত। আলীগড় আন্দোলনের সফলতার ক্ষেত্রে স্যার সৈয়দ আহমদ খানের পুত্র সৈয়দ মাহমুদও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। আলীগড় আন্দোলন কালক্রমে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে এবং অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়। এর ফলে এমন এক শ্রেণির উদ্ভব হয় যারা পাশ্চাত্য এবং নিজেদের মর্যাদা রক্ষা এবং হারিয়ে যাওয়া গৌরব পুনরুদ্ধার করার জন্য নতুনভাবে চিন্তা করতে সক্ষম হয়।

0 টি ভোট
নারী কল্যাণ ও সংস্কারক হিসেবে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা মূল্যায়ন করো?

ভূমিকা-

বাংলা, পাক-ভারত উপমহাদেশে প্রচলিত বিভিন্ন কুসংস্কার, জাতিভেদ ও বর্ণভেদ প্রথা, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং হিন্দুধর্মের সংস্কারের লক্ষ্যে উনিশ শতকে কতকগুলো সংস্কার আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। তাদের মধ্যে একটি অন্যতম সংস্কার ও আন্দোলনধর্মী প্রতিষ্ঠান হলো ব্রাহ্মসমাজ। ভারতবর্ষের পুনর্জাগরণের অগ্রদূত রাজা রামমোহন রায় কিছু আধুনিক পশ্চিমা আদর্শের প্রভাবমুক্ত যুক্তিসম্পন্ন ও উদারনৈতিক বন্ধুর সহযোগিতায় নতুন ধর্মমত ও পথের সন্ধানে ১৮২৮ সালে এ 'ব্রাহ্মসমাজ' প্রতিষ্ঠা করেন। ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠার আগে তিনি ১৮১৫ সালে আত্মীয় সভা এবং ১৮২১ সালে 'ইউনিটারিয়ান কমিটি' নামে আর একটি সভা স্থাপন করেন। কিন্তু নানাবিধ কারণে এ সভা দুটো খুব বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করতে সক্ষম না হওয়ায় এগুলোকে পুনর্গঠিত করে তিনি ব্রাহ্মসমাজ গড়ে তোলেন।পরম নিরাকার এক ব্রাহ্ম বা সৃষ্টিকর্তার উপাসনার জন্য এর নাম দেওয়া হয় ব্রাহ্মসমাজ।

ব্রাহ্মসমাজের অবদান। নিম্নে ব্রাহ্মসমাজের অবদান তুলে ধরা হলো-

১. উপাসনালয় প্রতিষ্ঠা-

 ১৮৩০ সালের ২৩ জানুয়ারি কলকাতায় ব্রাহ্মসমাজের নতুন ভবন নির্মিত হয়। এ উপাসনা মন্দিরে জাতি-ধর্ম-বর্ণ শ্রেণি নির্বিশেষে পরমেশ্বরে উপাসনার জন্য উন্মুক্ত করা মূর্তি, চিত্র বা প্রতীকী ব্যবহার, মদ্যপান, অন্য ধর্ম ওক্সালিহিংসা নিহিত ঘোষিত হয়। সভা-সমিতির মাধ্যমে পরম স্রষ্টার ধ্যান-ধারণার প্রসার, প্রেম-প্রীতি, ভক্তি ভালোবাসা, দয়া-দাক্ষিণ্য নৈতিক চরিত্র প্রভৃতি সৎগুণাবলির বিকাশ সাধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়।

২. সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদ-

হিন্দু সমাজে প্রচলিত জঘন্য ও নিষ্ঠুর প্রথা সতীদাহ উচ্ছেদে ব্রাহ্মসমাজ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীকে সতী হিসেবে মানুষের গায়ের লোম সংখ্যা বছর পতিসহ সুখে বসবাসের লোভ দেখিয়ে স্বামীর জ্বলন্ত চিতায় পড়িয়ে মারা হতো। রাজা রামমোহন রায় এ অমানবিক প্রথার বিরুদ্ধে সচেতনতা ও জনমত সৃষ্টি করে। ১৮১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর লর্ড বেন্টিঙ্ক সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদ আইন প্রণয়ন করে এর বিরুদ্ধে দণ্ডাদেশ জারি করেন। প্রাচীন পন্থি গোঁড়া হিন্দুরা এর প্রতিবাদ করেন। তার সরকার এবং প্রিভি কাউন্সিলের কাছে এই আইন প্রত্যাহারের জন্য আপিল করে। রাজা রামমোহন বিভিন্ন যুক্তিতর্কসহকারে সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদেরাজা রামমোহন বিভিন্ন যুক্তিতর্কসহকারে সতীদাহ প্রথা কমন্স সভায় গমন করেন। ফলে গোঁড়া হিন্দুদের আপিল বরখাস্ত হয় এবং চিরদিনের জন্য সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদ হয়।

৩. শিক্ষাবিস্তার-

 শিক্ষা বিশেষত নীতিমূলক ও নারী শিক্ষা বিস্তারে ব্রাহ্মসমাজ ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। কেশবচন্দ্রের পরিচালনায় কোলকাতা কলেজ, নারী শিক্ষার জন্য ভিক্টোরিয়া কলেজ (১৮৭০) কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের পরীক্ষা ব্যবস্থা (১৮৮৭) ও অনন্যা স্কুল কলেজ, নৈশ্যবিদ্যালয়, শ্রমিকদের জন্য পৃথক বিদ্যালয় প্রভৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়। বই-পুস্তক ও পত্রিকা প্রকাশ, গ্রন্থাগার প্রভৃতির মাধ্যমে শিক্ষা বিস্তারে এ আন্দোলন অবদান রাখে। নারী শিক্ষার জন্য অন্তঃপুর স্ত্রী শিক্ষার সভা গঠিত হয়।

৪. কুসংস্কার দূরীকরণ-

হিন্দু সমাজে প্রচলিত বহুবিধ কুসংস্কার প্রতিরোধ ও প্রতিকারে ব্রাহ্মসমাজ সফল হয়। যেমন বিধবাদের পুনঃবিবাহ, বাল্য ও বহু বিবাহ রোধ, নারীপুরুষের বিয়ের বয়স বৃদ্ধি, অসমবর্ণ বিয়ে সঙ্গতকরণ যৌতুক প্রথা বর্জন, অজ্ঞতা দূরীকরণ হিন্দু রমণীদের সম্পত্তিতে মালিকানা প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি। ব্রাহ্ম মহিলাদের প্রচেষ্টায় নারী শিক্ষা সম্প্রসারণ ও কুসংস্কার দূরীকরণ কার্যক্রম বেশ ফলপ্রসূ হয়েছিল। তারা বাল্য বিয়ে রোধকল্পে বাল্য বিয়ে নির্ধারণী সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। গোঁড়ামি বর্ণভেদ প্রথা প্রভৃতি দূরীকরণেও ব্রাহ্মসমাজ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টিতে এর অবদান অনন্য।

৫. কার্যক্রম পরিচালনা-

সমাজসেবা ও ত্রাণকাজেও ব্রাহ্মসমাজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। উত্তর ও পশ্চিম ভারতে দুর্ভিক্ষ চলাকালে এবং ভাগীরথীর তীরে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা দিলে সমাজের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করে দুর্গতদের সেবা করা হয়। তাছাড়া সমাজ জলা জঙ্গল উচ্ছেদ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি প্রকল্প গ্রহণ করে।

৬. মাদকদ্রব্য বর্জন-

 ১৮৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত ভারত সংস্কার সভা বিভাগের মাধ্যমে মদ ও মদ্যপান নিবারণে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সরকারের কাছে মাদকদ্রব্য আবেদনের ফলে মদ্য ব্যবসায়ে বিধি নিষেধ আরোপিত হয়। ১৮৭৮ সালে গঠিত আশালতা দল নামক প্রতিষ্ঠা মাদকদ্রব্য গ্রহণের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করে।

৭. আন্দোলনের সম্প্রসারণ-

 ব্রাহ্মসমাজ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, একেশ্বরবাদ প্রচার, কুসংস্কার দূরীকরণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক পদক্ষেপের মাধ্যমে সম্প্রসারিত হয়। তবে গোঁড়াপন্থি যুক্তিবাদী ও উদারপন্থিরা ব্রাহ্মসমাজের সম্প্রসারণে এগিয়ে আসেন। দেবেন্দ্রনাথ, প্রসন্নকুমার ঠাকুর, নীলরতন হালদার, কেশবচন্দ্র প্রমুখ মনীষীর প্রচেষ্টার ব্রাহ্মসমাজ সমাজসংস্কারে ব্যাপক আন্দোলন ও আলোড়ন সৃষ্টি করে। বাংলাদেশেও এর সম্প্রসারণ ঘটে এবং ১৮৪৬ সালে ঢাকায় সর্ববৃহৎ ও স্থাপত্য কারুকার্য সমৃদ্ধ ব্রাহ্ম মন্দির স্থাপিত হয়।

উপসংহার-

পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রাহ্মসমাজ ভারতবর্ষের বিভিন্ন কুসংস্কারের মূলোৎপাটন, শিক্ষাবিস্তার, সম্প্রীতি স্থাপন, নারীদের সমান মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সর্বোপরি আধ্যাত্মিক উন্নতিতে অনন্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়। সতীদাহ প্রথার বিলোপ পর্দা প্রথার বিলোপ শিশুবিবাহ নিরুৎসাহিতকরণ বহুবিবাহ রোধ প্রভৃতি ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা পালনে ব্রাহ্মসমাজ সদ্য সচেষ্ট ছিল। ভারতীয় নবজাগরণের অগ্রদূত রামমোহন রায় কর্তৃক প্রতিটিতে ব্রাহ্মসমাজ সমগ্র ভারতবর্ষে জাতীয়তাবাদী আদর্শ প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

0 টি ভোট
ধর্মীয় ও সমাজ সংস্কারে ব্রাহ্মসমাজের ভূমিকা তুলে ধর?

ভূমিকা-

হিন্দুসমাজের প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার দূরীকরণ ও জাতিভেদ দ্বন্দ্ব নিরসনে সমাজ সংস্কারের অন্যতম একটি সংগঠন হলো ব্রাহ্মসমাজ। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধে ও উনবিংশ শতাব্দীতে ভারতীয় উপমহাদেশে সমাজসংস্কারের অন্যতম প্রবর্তক হলো রাজা রামমোহন রায়। সমাজসংস্কার আন্দোলনের অন্যতম প্রবর্তক হলো রাজা রামমোহন রায়। সমাজসংস্কার আন্দোলনের অন্যতম এক রূপ এই ব্রাহ্ম সমাজ পরিচালিত কার্যক্রম। ১৮২৮ সালে আত্মীয়সভার অসংখ্য সদস্য নিয়ে রাজা রামমোহন রায় ধর্মভিত্তিক এই ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। ধর্মীয় ও সমাজ সংস্কারে ব্রাহ্মসমাজের ভূমিকা অনন্য।

ধর্ম ও সমাজসংস্কারে ব্রাহ্মসমাজের অবদান তৎকালীন ধর্ম ও সমাজসংস্কারে ব্রাহ্মসমাজের অবদান অনস্বীকার্য। ব্রাহ্মসমাজের ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কারে কিছু ভূমিকা নিম্নরূপ-

১. নারী শিক্ষার প্রসার- 

নারী শিক্ষার প্রসারে ব্রাহ্মসমাজের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেশবচন্দ্র সেন বাংলাদেশে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রেখেছেন। তিনি ১৮৬৩ সালে 'ব্রাহ্মবন্ধু' সভা প্রতিষ্ঠা করেন। যার মাধ্যমে নারীদেরকে বিশেষ করে বয়স্কা নারীদের জন্য 'অন্তঃপুর স্ত্রী শিক্ষা' সভা গঠন করেন ও শিক্ষা দান চালিয়ে যান। ঘরে বসেই নারীরা যাতে শিক্ষালাভকরতে পারে তার ব্যবস্থা এতে থাকে।

২. গণতন্ত্রের চর্চা-

 গণতন্ত্র চর্চা ও প্রসারে ব্রাহ্ম সমাজ অগ্রণী ভূমিকা রাখে। ব্রাহ্ম সমাজে উঁচু-নিচু জাত পাত্র ভেদাভেদ না করে এতে সকলের অংশগ্রহণের সুযোগদান নিশ্চিত করে। সবাই স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ ও সমাজে শৃঙ্খলা রক্ষা করে চলার শিক্ষা পায়। ফলে গণতন্ত্রের জয়যাত্রা সূচিত হয়।

৩. সৎগুণাবলির বিকাশে সহায়তা-

মানুষ প্রভুর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।তার প্রভুর প্রতি রয়েছে অনেক কর্তব্য। পরমেশ্বরের উপাসনার জন্য মানুষ উপাসনালয়ে যায়। ১৮৩০ সালে ব্রাহ্মসমাজ নতুন ভবন স্থাপন করার মাধ্যমে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য উপাসনার সুযোগ সৃষ্টি করে। ঐ ভবনের বিভিন্ন সভাসমিতির মাধ্যমে প্রভুর আরাধনা, প্রেমপ্রীতি, দয়ামায়া, জীবপ্রেম প্রভৃতি সৎমানবীয় গুণাবলির বিকাশ ঘটানো হয়।

৪. মাদকদ্রব্য গ্রহণে বাধা সৃষ্টি-

ভারতীয় উপমহাদেশে সর্বপ্রকার মাদকদ্রব্য সেবন ও প্রসারে বাধা সৃষ্টি করে ব্রাহ্মসমাজ। ১৮৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত ভারত সংস্কার সভা বিভােেগর মাধ্যমে মদ ও মদ্যপান নিবারণে আবেদন করা হলে ভারত সরকার মদ্য ব্যবহারের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপিত হয়। মাদকের ব্যবহার বন্ধে ১৮৭৮ সালে গড়ে উঠে 'আশালতা দল'।

৫. বাল্যবিবাহ ও যৌতুকপ্রথা বন্ধ ও বিধবা বিবাহের প্রসারে-

 তৎকালীন সমাজে নারীকে ভোগ্যপণ্যের সাথে তুলনা করা হতো। নারীকে বিবাহের মাধ্যমে পণ অর্থাৎ-যৌতুক নিত বর পক্ষ। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে হতো। বিয়ের পর স্বামী মারা গেলে সারাজীবন বিধবা বা সতীদাহ প্রথার আদলে স্বামীর সঙ্গে চিতায় পুড়ে মারা হতো। এহেন করুণ অবস্থায় নারীদের অধিকার অর্থাৎ যৌতুক প্রথা উচ্ছেদ ও বাল্যবিবাহ বন্ধের পাশাপাশি বিধবাদের বিবাহ দানে এই ব্রাহ্মসমাজ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে শুরু করে।

৬. বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন-

শিক্ষাকে কার্যকর রূপ দিতে কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে ভিক্টোরিয়া কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের পরীক্ষা দানের সুযোগের সুবন্দোবস্ত করা হয়। ফলে নারী শিক্ষা ফলপ্রসূ হয়।

৭. সতীদাহ প্রথার বিলোপ সাধন-

ব্রাহ্মসমাজের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান হলো সতীদাহ প্রথার বিলোপ সাধন। হিন্দু ধর্মান্ধতার এক নিষ্ঠুর পৈশাচিক প্রথা এই সতীদাহ। তৎকালীন হিন্দু সমাজে বিশ্বাস করা হতো যে, স্বামীর সঙ্গে চিতায় পুড়লে স্ত্রীও স্বর্গে যাবে। ১৮১৫ সাল থেকে ১৮২৮ সালে অবিভক্ত বাংলায় ৮,১৩৪টি এই অমানবিক সতীদাহের ঘটনা ঘটে। রাজা রামমোহন রায়ের নেতৃত্বে সতীদাহ প্রথা বিলোপ সাধন আইন পাস করেন ইংরেজ লর্ড বেন্টিংক ১৮২৯ সালের ৪ই ডিসেম্বর।

৮. নৈশ বিদ্যালয় ও বিধবাশ্রমের প্রসার-

অসহায় করে ব্রাহ্ম সমাজের মাধ্যমে। এবং দরিদ্র শ্রমিকদের অধিকার জ্ঞান বাড়াতে নৈশ বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়। ফলশ্রুতিতে সমাজে গঠনমূলক পরিবর্তন আসে।

৯. ধর্মীয় কুসংস্কার দূরীকরণ-

হিন্দু সমাজে বহু প্রভুতে বিশ্বাসী অনেকে ছিলেন। যারা মূলত ভ্রান্ত ধর্মীয় নীতি অনুসরণ করতো। এদেরকে সঠিক পথে আনতে রাজা রামমোহন রায় একেশ্বরবাদ ধারণা প্রচার করেন। এভাবে নানা ধর্মীয় ত্রুটি দূরীভূত হয়।

১০. জনগণকে অধিকার সচেতন-

ভারতীয় জনগণ তখনও ছিল ব্রিটিশ পরাভূত। রাজা রামমোহন রায় তাদের ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার ভোগে শিক্ষার প্রসার ও কুসংস্কার দূরীকরণে ব্রাহ্মসমাজ নিয়ে প্রচেষ্টা চালাতে থাকে।

উপসংহার-

পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজ পরিবর্তনশীল। সময়ের সাথে সাথে সমাজ হতে কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, অবিচার দূরীভূত হবে জোনো না কোনো সংস্কার সংগঠনের মাধ্যমে। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রাহ্মসমাজ তেমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন ছিল। সুতরাং আধুনিক হিন্দু সমাজ বিনির্মাণে ব্রাহ্মসমাজের ভূমিকা অনস্বীকার্য ও তাৎপর্যমণ্ডিত।

0 টি ভোট
বাংলাদেশে সমাজকর্মের গুরুত্ব আলোচনা করো?
  • ভূমিকা-

সমাজকর্ম হলো একটি সাহায্যকারী পেশা এবং সমস্যা সমাধানের বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া। প্রাচীনকাল থেকেই স্বেচ্ছামূলক বা অপেশাদার সমাজকল্যাণ সমাজের মানুষের প্রয়োজন এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিয়ে আসছিল। কিন্তু আধুনিক যুগের শিল্পায়ন ও শহরায়নের ফলে উদ্ভূত নতুন ও জটিল সমস্যাসমূহের সমাধান যখন গতানুগতিক সমাজকল্যাণ দ্বারা মোকাবিলা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে, তখন বস্তুত নতুন এবং জটিল সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত সমাধানের লক্ষ্যেই সমাজকর্মের অভ্যুদয়।

 সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যেই যেহেতু সমাজকর্মের উদ্ভব, আর বাংলাদেশের সমাজে যেহেতু অসংখ্য সমস্যা বিরাজমান এ কারণে বাংলাদেশে সমাজকর্ম পাঠের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। নিম্নে বাংলাদেশে সমাজকর্ম পাঠের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো-

  • ১. প্রাপ্ত সম্পদের সদ্ব্যবহার-

বাংলাদেশের জনগণের অজ্ঞতা ও নিরক্ষরতার কারণে সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করতে জানে না। এক্ষেত্রে সমাজকর্ম পেশার জ্ঞানধারী দক্ষ সমাজকর্মীগণ অজ্ঞ ও নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে প্রাপ্ত সম্পদের সদ্ব্যবহার করতে সমাজকর্ম পাঠ করা জরুরি।

  • . সামাজিক কার্যক্রমকে বাস্তবোপযোগী করা-

বাংলাদেশের সঠিক আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য সমাজকর্ম পাঠ করা প্রয়োজন। কারণ সমাজকর্মের জ্ঞান ও কৌশল প্রয়োগ করে দেশের প্রচলিত সামাজিক কার্যক্রমকে বাস্তবোপযোগী করে তোলা সম্ভব। তাই বাংলাদেশে সমাজকর্ম পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।

  • ৩. কৃষি উন্নয়ন-

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের উন্নয়ন করতে হলে অবশ্যই কৃষির উন্নয়ন করতে হবে। আর সমাজকর্ম কৃষকদের উন্নয়নের জন্য অজ্ঞতা ও কুসংস্কার দূর করে কৃষকদের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রযুক্তিনির্ভর উন্নতমানের চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে। এজন্য বাংলাদেশে সমাজকর্ম পাঠ করা একান্ত প্রয়োজন।

  • . স্বাবলম্বী মনোভাব সৃষ্টি-

বাংলাদেশে বেকার জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানোর জন্য একদিকে যেমন দরকার প্রয়োজনীয় সুযোগ সৃষ্টির, তেমনি প্রয়োজন জনগণের মধ্যে স্বাবলম্বী মনোভাব গড়ে তোলা। সমাজকর্ম জনগণকে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদান করে স্বাবলম্বী হবার শিক্ষা প্রদান করে। তাই বাংলাদেশের জনগণকে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য সমাজকর্ম অধ্যয়ন করা প্রয়োজন।

  • . সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি-

সামাজিক সমস্যা সমাধানে সামাজিক সচেতনতা অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সমাজকর্ম পদ্ধতিসমূহ বিশেষ করে সামাজিক কার্যক্রম পদ্ধতি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যও সমাজকর্ম পাঠ করা প্রয়োজন।

  • ৬. মানব সম্পদ উন্নয়ন-

বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য মানব সম্পদের উন্নয়ন সাধন করা দরকার। আর সমাজকর্ম অধ্যয়নের মাধ্যমে মানব সম্পদের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। মানব সম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে কিভাবে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটানো যায় সমাজকর্ম অধ্যয়নের মাধ্যমে। তা জানা যায়। তাই বাংলাদেশে সমাজকর্ম পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম।

  • ৭. সামাজিক সমস্যার প্রতিকার ও প্রতিরোধ-

বাংলাদেশের অসংখ্য সমস্যা অক্টোপাসের ন্যায় জড়িয়ে ধরে আছে। সমাজকর্ম এসব সমস্যার কারণ ও প্রকৃতি নির্ণয় এবং সমাধানের ব্যবস্থা করে থাকে। একারণে বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সমাজকর্ম পাঠ করা প্রয়োজন।

  • ৮. সুষ্ঠু সামাজিক ভূমিকা পালন-

 বাংলাদেশের জনগণের যথাযথ ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালনের শিক্ষা প্রদান করে। তাই বাংলাদেশের জনগণের সুষ্ঠু সামাজিক ভূমিকা পালন নিশ্চিত করার জন্য সমাজকর্ম পাঠ করা প্রয়োজন।

  • ৯. জনগণকে সংগঠিতকরণ-

বাংলাদেশের জনগণের বহুমুখী সমস্যা সমাধান করে জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত করা প্রয়োজন। সমাজকর্ম মানুষকে সংগঠিত করার শিক্ষা প্রদান করে। একারণে বাংলাদেশে সমাজকর্ম পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।

  • ১০. গ্রামীণ সমস্যা সমাধান-

 বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকাতেই সবচেয়ে বেশি সমস্যা বিরাজমান। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশে সমাজকর্মের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

  • ১১. স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমূহের জ্ঞানের উৎস-

বাংলাদেশে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমূহ এদেশের সমাজব্যবস্থা, সামাজিক প্রক্রিয়া, সামাজিক আন্তঃক্রিয়া ও আধুনিক উন্নয়ন ন্নয়ন কৌশল সম্পর্কে কর্মীদের উন্নয়নের জন্য সমাজকর্ম অধ্যয়ন করা একান্ত প্রয়োজন। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান নেই বললেই চলে। এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাজই হবে সমাজের সমস্যা দূর করা।

  • ১২. সামাজিক কুপ্রথা ও কুসংস্কার সম্পর্কে সচেতনতা-

বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ সামাজিক কুপ্রথা ও কুসংস্কারে বিশ্বাসী, যার ফলে এদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে না। সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য সমাজকর্ম পাঠ করা একান্ত জরুরি। তাই বাংলাদেশের সমাজদেহে বিরাজমান ব্যাপক কুপ্রথা ও কুসংস্কার

  • ১৩. স্থানীয় নেতৃত্বের বিকাশ সাধন-

 বাংলাদেশ গ্রামপ্রধানদেশ হওয়ায় স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়নমূলক কর্মসূচি প্রণয়ন এবং বাস্তাবায়নের জন্য স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বের বিকাশ সাধন করা অপরিহার্য। স্থানীয় নেতৃত্বের বিকাশ সাধনে বাংলাদেশে সমাজকর্ম পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। সমাজকর্ম বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে। একারণে একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ১৪. সামাজিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন বাংলাদেশ রাজনৈতিক উন্নয়নের জন্য কল্যাণমুখী সামাজিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা একান্ত প্রয়োজন।উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায় এদেশের আর্থসামাজিক সমস্যা এতোই।

  • উপসংহার-

পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশ একটি জটিল যে সরকারের একার পক্ষে এ সমস্ত সমস্যার কার্যকর সমাধান দেওয়া সম্ভব নয়। একারণে সরকারি ও বেসরকারি পদক্ষেপ এবং দক্ষ ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সমাজকর্মীদের সুদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও পরামর্শ নীতি ও পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলাদেশের সকল সমস্যাই কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব।

0 টি ভোট
বিভারিজ রিপোর্টের প্রেক্ষাপটসমূহ কি কি?
  • ভূমিকা-

বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ কোনো বিপর্যয়কে মোকাবিলা করার লক্ষ্যে নতুন কিছুর উদ্ভব ঘটে। বিভারিজ রিপোর্টও তার ব্যতিক্রম নয়। ১৯৪১ সালে বিশ্বযুদ্ধজনিত সমস্যা ইংল্যান্ডের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বেশ জটিলতার সৃষ্টি করে। যার প্রতিকার ছিল অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই নাগরিক সুবিধা সামাজিক নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করার জন্য গঠিত হয় বিভারিজ রিপোর্ট।

  • পটভূমি বা প্রেক্ষাপট- 

১৯৪১ সালে ২য় বিশ্বযুদ্ধজনিত কারণে ইংল্যান্ডের আর্থসামাজিক সমস্যা মোকাবিলার জন্য সমাজসেবা কর্মসূচির আমূল পরিবর্তন অপরিহার্য হয়ে ওঠে। উক্ত পরিস্থিতি বিবেচনা করে লেবার পার্টির পুনর্গঠন মন্ত্রী আর্থার গ্রিনউড পার্লামেন্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্যার উইলিয়াম বিভারিজের নেতৃত্বে সামাজিক বিমা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির আন্তঃ বিভাগীয় কমিটি গঠন করেন। এরপর বিভিন্ন সরকারি সাহায্য সংস্থা, সামাজিক বিমা, পেনশন, স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত হয় এ কমিটি। সর্বস্তরের কার্যাবলি পর্যবেক্ষণ এবং পর্যালোচনা - করে ১৯৪২ সালের নভেম্বর মাসে একটি রিপোর্ট পেশ করা হয়। যা সমাজসেবার ইতিহাসে বিভারিজ রিপোর্ট নামে পরিচিত।

  • উপসংহার-

পরিশেষে বলা যায় যে, ইংল্যান্ডের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রণয়নের ভিত্তি হিসেবে বিভারিজ রিপোর্টকে ধরা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সমাজকল্যাণমূলক আইন ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আদর্শ ও মডেল হিসেবে এটি স্বীকৃত। বিশেষ করে সাবেক ব্রিটেন কলোনীভুক্ত দেশগুলোতে এটি অনুসরণ করা হয়ে থাকে। এছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশ বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোতে অনুসরণ করা হয়।

আরও দেখতে, এই বিভাগের প্রশ্নগুচ্ছ দেখতে ক্লিক করুন।

96 টি প্রশ্ন

95 টি উত্তর

0 টি মন্তব্য

2 জন সদস্য

Questionbd❓ এ সুস্বাগতম, যেখানে আপনি প্রশ্ন করতে পারবেন এবং গোষ্ঠীর অন্যান্য সদস্যদের নিকট থেকে উত্তর পেতে পারবেন।
...