0 টি ভোট

ধর্মীয় ও সমাজ সংস্কারে ব্রাহ্মসমাজের ভূমিকা তুলে ধর?

  • ধর্মীয় ও সমাজ সংস্কারে ব্রাহ্মসমাজের তাৎপর্য বর্ণনা কর?

1 উত্তর

0 টি ভোট

ভূমিকা-

হিন্দুসমাজের প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার দূরীকরণ ও জাতিভেদ দ্বন্দ্ব নিরসনে সমাজ সংস্কারের অন্যতম একটি সংগঠন হলো ব্রাহ্মসমাজ। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধে ও উনবিংশ শতাব্দীতে ভারতীয় উপমহাদেশে সমাজসংস্কারের অন্যতম প্রবর্তক হলো রাজা রামমোহন রায়। সমাজসংস্কার আন্দোলনের অন্যতম প্রবর্তক হলো রাজা রামমোহন রায়। সমাজসংস্কার আন্দোলনের অন্যতম এক রূপ এই ব্রাহ্ম সমাজ পরিচালিত কার্যক্রম। ১৮২৮ সালে আত্মীয়সভার অসংখ্য সদস্য নিয়ে রাজা রামমোহন রায় ধর্মভিত্তিক এই ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। ধর্মীয় ও সমাজ সংস্কারে ব্রাহ্মসমাজের ভূমিকা অনন্য।

ধর্ম ও সমাজসংস্কারে ব্রাহ্মসমাজের অবদান তৎকালীন ধর্ম ও সমাজসংস্কারে ব্রাহ্মসমাজের অবদান অনস্বীকার্য। ব্রাহ্মসমাজের ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কারে কিছু ভূমিকা নিম্নরূপ-

১. নারী শিক্ষার প্রসার- 

নারী শিক্ষার প্রসারে ব্রাহ্মসমাজের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেশবচন্দ্র সেন বাংলাদেশে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রেখেছেন। তিনি ১৮৬৩ সালে 'ব্রাহ্মবন্ধু' সভা প্রতিষ্ঠা করেন। যার মাধ্যমে নারীদেরকে বিশেষ করে বয়স্কা নারীদের জন্য 'অন্তঃপুর স্ত্রী শিক্ষা' সভা গঠন করেন ও শিক্ষা দান চালিয়ে যান। ঘরে বসেই নারীরা যাতে শিক্ষালাভকরতে পারে তার ব্যবস্থা এতে থাকে।

২. গণতন্ত্রের চর্চা-

 গণতন্ত্র চর্চা ও প্রসারে ব্রাহ্ম সমাজ অগ্রণী ভূমিকা রাখে। ব্রাহ্ম সমাজে উঁচু-নিচু জাত পাত্র ভেদাভেদ না করে এতে সকলের অংশগ্রহণের সুযোগদান নিশ্চিত করে। সবাই স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ ও সমাজে শৃঙ্খলা রক্ষা করে চলার শিক্ষা পায়। ফলে গণতন্ত্রের জয়যাত্রা সূচিত হয়।

৩. সৎগুণাবলির বিকাশে সহায়তা-

মানুষ প্রভুর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।তার প্রভুর প্রতি রয়েছে অনেক কর্তব্য। পরমেশ্বরের উপাসনার জন্য মানুষ উপাসনালয়ে যায়। ১৮৩০ সালে ব্রাহ্মসমাজ নতুন ভবন স্থাপন করার মাধ্যমে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য উপাসনার সুযোগ সৃষ্টি করে। ঐ ভবনের বিভিন্ন সভাসমিতির মাধ্যমে প্রভুর আরাধনা, প্রেমপ্রীতি, দয়ামায়া, জীবপ্রেম প্রভৃতি সৎমানবীয় গুণাবলির বিকাশ ঘটানো হয়।

৪. মাদকদ্রব্য গ্রহণে বাধা সৃষ্টি-

ভারতীয় উপমহাদেশে সর্বপ্রকার মাদকদ্রব্য সেবন ও প্রসারে বাধা সৃষ্টি করে ব্রাহ্মসমাজ। ১৮৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত ভারত সংস্কার সভা বিভােেগর মাধ্যমে মদ ও মদ্যপান নিবারণে আবেদন করা হলে ভারত সরকার মদ্য ব্যবহারের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপিত হয়। মাদকের ব্যবহার বন্ধে ১৮৭৮ সালে গড়ে উঠে 'আশালতা দল'।

৫. বাল্যবিবাহ ও যৌতুকপ্রথা বন্ধ ও বিধবা বিবাহের প্রসারে-

 তৎকালীন সমাজে নারীকে ভোগ্যপণ্যের সাথে তুলনা করা হতো। নারীকে বিবাহের মাধ্যমে পণ অর্থাৎ-যৌতুক নিত বর পক্ষ। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে হতো। বিয়ের পর স্বামী মারা গেলে সারাজীবন বিধবা বা সতীদাহ প্রথার আদলে স্বামীর সঙ্গে চিতায় পুড়ে মারা হতো। এহেন করুণ অবস্থায় নারীদের অধিকার অর্থাৎ যৌতুক প্রথা উচ্ছেদ ও বাল্যবিবাহ বন্ধের পাশাপাশি বিধবাদের বিবাহ দানে এই ব্রাহ্মসমাজ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে শুরু করে।

৬. বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন-

শিক্ষাকে কার্যকর রূপ দিতে কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে ভিক্টোরিয়া কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের পরীক্ষা দানের সুযোগের সুবন্দোবস্ত করা হয়। ফলে নারী শিক্ষা ফলপ্রসূ হয়।

৭. সতীদাহ প্রথার বিলোপ সাধন-

ব্রাহ্মসমাজের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান হলো সতীদাহ প্রথার বিলোপ সাধন। হিন্দু ধর্মান্ধতার এক নিষ্ঠুর পৈশাচিক প্রথা এই সতীদাহ। তৎকালীন হিন্দু সমাজে বিশ্বাস করা হতো যে, স্বামীর সঙ্গে চিতায় পুড়লে স্ত্রীও স্বর্গে যাবে। ১৮১৫ সাল থেকে ১৮২৮ সালে অবিভক্ত বাংলায় ৮,১৩৪টি এই অমানবিক সতীদাহের ঘটনা ঘটে। রাজা রামমোহন রায়ের নেতৃত্বে সতীদাহ প্রথা বিলোপ সাধন আইন পাস করেন ইংরেজ লর্ড বেন্টিংক ১৮২৯ সালের ৪ই ডিসেম্বর।

৮. নৈশ বিদ্যালয় ও বিধবাশ্রমের প্রসার-

অসহায় করে ব্রাহ্ম সমাজের মাধ্যমে। এবং দরিদ্র শ্রমিকদের অধিকার জ্ঞান বাড়াতে নৈশ বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়। ফলশ্রুতিতে সমাজে গঠনমূলক পরিবর্তন আসে।

৯. ধর্মীয় কুসংস্কার দূরীকরণ-

হিন্দু সমাজে বহু প্রভুতে বিশ্বাসী অনেকে ছিলেন। যারা মূলত ভ্রান্ত ধর্মীয় নীতি অনুসরণ করতো। এদেরকে সঠিক পথে আনতে রাজা রামমোহন রায় একেশ্বরবাদ ধারণা প্রচার করেন। এভাবে নানা ধর্মীয় ত্রুটি দূরীভূত হয়।

১০. জনগণকে অধিকার সচেতন-

ভারতীয় জনগণ তখনও ছিল ব্রিটিশ পরাভূত। রাজা রামমোহন রায় তাদের ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার ভোগে শিক্ষার প্রসার ও কুসংস্কার দূরীকরণে ব্রাহ্মসমাজ নিয়ে প্রচেষ্টা চালাতে থাকে।

উপসংহার-

পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজ পরিবর্তনশীল। সময়ের সাথে সাথে সমাজ হতে কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, অবিচার দূরীভূত হবে জোনো না কোনো সংস্কার সংগঠনের মাধ্যমে। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রাহ্মসমাজ তেমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন ছিল। সুতরাং আধুনিক হিন্দু সমাজ বিনির্মাণে ব্রাহ্মসমাজের ভূমিকা অনস্বীকার্য ও তাৎপর্যমণ্ডিত।

96 টি প্রশ্ন

95 টি উত্তর

0 টি মন্তব্য

2 জন সদস্য

Questionbd❓ এ সুস্বাগতম, যেখানে আপনি প্রশ্ন করতে পারবেন এবং গোষ্ঠীর অন্যান্য সদস্যদের নিকট থেকে উত্তর পেতে পারবেন।
...