- মুসলমানদের শিক্ষা ক্ষেত্রে আলীগড় আন্দোলনের অবদান বর্ণনা কর।
ভূমিকা-
ব্রিটিশ ভারতে যেসব আন্দোলন সমাজসেবার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এর মধ্যে শিক্ষিত করে কুসংস্কারমুক্ত করার মানসে এ আন্দোলন গড়ে করেন স্যার সৈয়দ আহমদ খান। তিনি মুসলমানদের তোলেন। স্যার সৈয়দ আহমদ খান তার সমস্ত জীবন প্রধানত মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষা দীক্ষার বিস্তার সাধনেই ব্যয় করেন।
ব্রিটিশ শাসিত ভারতে অধঃপতিত মুসলমানদেরকে কুসংস্কারমুক্ত করে আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের জন্য স্যার সৈয়দ আহমদ খান যে জাগরণ সৃষ্টি করেছিলেন ইতিহাসে তাই 'আলীগড় আন্দোলন' নামে পরিচিত।
শিক্ষা সংস্কারে আলীগড় আন্দোলনের অবদান অবিভক্ত, ভারতবর্ষে মুসলমানদের শিক্ষাক্ষেত্রে উৎকর্ষ সাধনের জন্য আলীগড় আন্দোলনের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। নিম্নে শিক্ষা ক্ষেত্রে আলীগড় আন্দোলনের অবদান তুলে ধরা হলো-
১. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ-
মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার বাস্তব আলো পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্যার সৈয়দ আহমদ খান অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ১৮৭৫৯ সালে মুরাদাবাদে নির্মিত স্কুল, ১৯৬৩ সালে গাজীপুরে নির্মিত স্কুল এবং ১৮৭৪ সালে আলীগড়ে স্থাপিত বিশ্ববিখ্যাত 'মোহামেডান অংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ' প্রভৃতি। এ আলীগড় কলেজকে কেন্দ্র করেই তার সকল সামাজিক আন্দোলন পরিচালিত হতো।
২. গ্রন্থ ও প্রবন্ধ প্রকাশ-
স্যার সৈয়দ আহমদ খান তার স্বজাতিকে সচেতন করে তোলার জন্য এ সময় বিভিন্ন গ্রন্থ ও প্রবন্ধ লেখা শুরু করেন। সিপাহী বিপ্লবের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি ১৯৫৯ সালে উর্দু ভাষায় রচনা করেন 'আমহাব-ই-বাগওয়াতে হিন্দু নামক গ্রন্থ। উপরন্তু তিনি Thajib-al-Akhlaq পত্রিকায় বিভিন্ন প্রবন্ধ লিখে মুসলমানদের মধ্যে এই বিশ্বাস উদয়াটনের চেষ্টা করেন যে, পাশ্চাত্য চিন্তাধা রা বা জ্ঞানবিজ্ঞান ইসলামবিরোধী নয়।
৩. বিজ্ঞান সমিতি প্রতিষ্ঠা-
স্যার সৈয়দ আহমদ মুসলমানদের বিজ্ঞানমনস্ক করার জন্য ১৮৬৩ সালে গাজীপুরে বিজ্ঞান সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে এটি আলীগড়ে স্থানান্তরিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল কোনো বিজ্ঞান আলোচনা, প্রচার পাশ্চাত্য শিক্ষা সম্প্রসারণ, বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ প্রকাশ।
৪. অনুবাদ সমিতি প্রতিষ্ঠা-
বৈজ্ঞানিক গ্রন্থাবলি, ইতিহাস, সাহিত্য, কৃষি, ধর্ম প্রভৃতি গ্রন্থসমূহ অনুবাদ করে মুসলমানদের সহজবোধ ও সহজপাঠ্য করার জন্য তিনি ১৮৬৪ সালে একটি অনুবাদ সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে এটি সাহিত্য ও বিজ্ঞান সমিতি নামে অভিহিত হয়। এ সমিতির মাধ্যমে কুসংস্কারে নিমজ্জিত মুসলমানদেরকে আত্মসচেতন করে গড়ে তোলার প্রয়াস চালানো হয়।
৫. শিক্ষা কমিটি গঠন-
শিক্ষা লাভ করা জনগণের ন্যায্য অধিকার এ ধারণাকে বাস্তবায়ন করার জন্য স্যার সৈয়দ আহমদ খান ১৮৬৪ সালে উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলীয় জেলাগুলোতে শিক্ষা কমিটি গঠন করেন।
৬. ইসলামি শিক্ষার উন্নয়ন-
জ্ঞানবিজ্ঞানের পাশাপাশি মুসলমানদেরকে ইসলামি অনুশাসন শিক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি গাজীপুরে ১৮৮৬ সালে ৬ মাদরাসাতুল উলুম প্রতিষ্ঠা করেন।
৭. সাময়িক পত্রিকা প্রকাশ-
মুসলমানদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করার জন্য ১৮৬৬ সালে বিজ্ঞান সমিতির পক্ষ থেকে আলীগড় ইনস্টিটিউট গেজেট নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করা হয়। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল একই কলাম উর্দু ও ইংরেজিতে প্রকাশ যাতে করে ভারতবাসী ও ইংরেজগণ প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবগত হতে পারে এবং উভয়ের সম্পর্কের উন্নতি ঘটে।
উপসংহার-
পরিশেষে বলা যায় যে, আলীগড় আন্দোলনের প্রবক্তা স্যার সৈয়দ আহমদ খান ছিলেন শিক্ষা ও সমাজসংস্কারকের অন্যতম সেরা কারিগর। মুসলমানদেরকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তিনি এক নব জাগরণের সৃষ্টি করেন।
96 টি প্রশ্ন
95 টি উত্তর
0 টি মন্তব্য
2 জন সদস্য