0 টি ভোট

হাজী শরীয়ত উল্লাহর ফরায়েজি আন্দোলনের কার্যক্রম ও প্রভাব আলোচনা করো?

ফরায়েজি আন্দোলনের কার্যক্রমের বিভিন্ন দিক তুলে ধর এবং সমকালীন মুসলিম সমাজে এর প্রভাব আলোচনা কর।

1 উত্তর

0 টি ভোট

ভূমিকা-

বর্তমান সমাজকল্যাণের অনেক কিছুই অতীতের সমাজ সংস্কারকদের সাধনা ও প্রচেষ্টার ফল। সমাজকল্যাণের সাথে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয় হিসেবে সমাজ সংস্কার চিহ্নিত। ফরায়েজি আন্দোলন সমাজ সংস্কারে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য, রাজনৈতিক শাসন-বঞ্চনার বিরুদ্ধে হাজী শরীয়ত উল্লাহর নেতৃত্বে ফরায়েজি আন্দোলন পরিচালিত হয়। ফরায়েজি আন্দোলনের মূল দর্শন ছিল মূলত মুসলমানদেরকে তাদের ধর্মীয় মূলনীতি অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। হাজী শরীয়ত উল্লাহর মৃত্যুর পর দুদু মিয়া এ আন্দোলন পরিচালিত করেন।

ফরায়েজি আন্দোলনের কার্যক্রম নিয়ে ফরায়েজি আন্দোলনের কার্যক্রমসমূহ বর্ণনা করা হলো-

১. ইসলামি আদর্শ প্রতিষ্ঠা-

ইসলাম মুসলমানদের পবিত্র ধর্ম।আর এ ধর্মের অনুসরণের মাধ্যমেই মানবতার কল্যাণ ও মুক্তি নিহিত। তাই মুসলমানদেরকে হাজী শরীয়ত উল্লাহ কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে জীবন পরিচালনার পথে উদ্বুদ্ধ করতো। এ আন্দোলনের একমাত্র লক্ষ্যই ছিল মুসলিম সমাজকে কুসংস্কার মুক্ত করে একেশ্বরবাদে উদ্বুদ্ধ করে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো দেব-দেবির পূজা, কবর পূজা, সেজদা করা প্রভৃতিকে হারাম ঘোষণা করা।

২. কুসংস্কার দূরীকরণ-

মুসলমান সমাজে যে সকল কুসংস্কার, শিরক ও বিদআত অনুপ্রবেশ করেছিল তা দূর করার লক্ষ্যেই এ আন্দোলন পরিচালিত হয়। ইসলামি নিয়মবহির্ভূত পির পূজা, পুষ্প অর্পণ, ওরশ পালন, জন্ম, বিয়ে, মৃত্যুতে অযথা অপচয় ইত্যাদি কুসংস্কার দূর করার চেষ্টা করা হয়। ফরায়েজি আন্দোলনের মাধ্যমে পির মুরিদ উপাধি বিলোপের চেষ্টা করা হয়। কারণ এর ফলে পিরের ওপর, মুরিদ নির্ভরশীল হয়ে পরনির্ভর ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়। ফলে তারা অন্যায়-অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সক্ষম হয় না এবং ন্যায্য অধিকার আদায় সম্পর্কে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠতে পারে না। হযরত ইমাম হাসান-হোসেনের মৃত্যু দিবসে অযথা হৈচৈ, উঁচু সমাধি নির্মাণ, আলোকসজ্জা, আশরাফ-আতরাফ সম্পর্ক পরিহারের জন্য তিনি উদাত্ত আহ্বান জানান।

৩. বৈষম্য দূরীকরণ-

হাজী শরীয়ত উল্লাহ মনে করতেন, "বংশের পরিচয় বড় নয়, কর্মই হলো মানুষের মূল্যায়নের মাপকাঠি।" মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সুতরাং তারা অন্যের অন্যায় শোষণ মেনে নিতে পারে না। তাই ফরায়েজি আন্দোলনের মাধ্যমে ইংরেজ নীলকর ও জমিদারের অন্যায় শোষণের বিরুদ্ধে এবং সামাজিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে মুসলমানদেরকে উদ্বুদ্ধ করেন। সেই সঙ্গে তিনি আর্থসামাজিক বৈষম্য দূরীকরণের জন্য প্রচেষ্টা চালান।

৪. "দারুল হরব" ঘোষণা-

প্রখ্যাত মনিষী হাজী শরীয়ত উল্লাহ ব্রিটিশ শাসিত ভারতকে 'দারুল হরব' বা শত্রুকবলিত দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং তিনি ঈদ ও জুমার নামায আদায় নিষিদ্ধ করেন। মুসলমানদেরকে ব্যাপক সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে ফরায়েজি আন্দোলনের মাধ্যমে একেশ্বরবাদের প্রতি এবং সাম্রাজ্যবাদের মহান আদর্শ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান। আর ইংরেজদের কবল থেকে স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করে 'দারুল ইসলাম' প্রতিষ্ঠান দুর্বার আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানান।

৫. বিদ্রোহ ঘোষণা-

 ধর্মীয় সংস্কার ও গোঁড়ামি দূরীকরণের ক্রমশ সামাজিক সংস্কার আন্দোলনে রূপ নেয়। ব্রিটিশ সরকারের শাসন ও শোষণ এবং ব্রিটিশ সরকার সৃষ্ট নরপশু জমিদার ও সুদখোর মহাজনদের অত্যাচার ও উৎপীড়নের হাত থেকে শ্রমজীবী মানুষকে রক্ষা করার জন্য আন্দোলনকে আরো তীব্রতর করে তোলেন। আর ফরায়েজি আন্দোলনে শরিক হয়ে এই অসহায় শ্রেণি জমিদার, মহাজন ও নীলকর বণিকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রেরণা পায়। তারা আত্মপ্রত্যয়ী হওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করে।

উপসংহার-

পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটিশ শোষণের বিরুদ্ধে যে সকল মনীষী তাদের আন্দোলন করেন তাঁর মধ্যে হাজী শরীয়ত উল্লাহ অন্যতম। তার নেতৃত্বে ভারতীয় উপমহাদেশে নীলকরদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছিল। মুসলিম সমাজের বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, কুসংস্কার দূর করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এছাড়া সামাজিক, ধর্মীয় গোঁড়ামি দূর করতে ফরায়েজি আন্দোলন অভূতপূর্ব ভূমিকা রাখে। নীলবিদ্রোহ করে মুসলমান তথা বাংলার জনগণের অধিকার রক্ষায় এ আন্দোলন ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করে।

96 টি প্রশ্ন

95 টি উত্তর

0 টি মন্তব্য

2 জন সদস্য

Questionbd❓ এ সুস্বাগতম, যেখানে আপনি প্রশ্ন করতে পারবেন এবং গোষ্ঠীর অন্যান্য সদস্যদের নিকট থেকে উত্তর পেতে পারবেন।
...