- সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রে ফরায়েজি আন্দোলনের অবদান লিখ।
ভূমিকা-
ব্রিটিশশাসিত ভারতে বিশিষ্ট হিন্দু-মুসলিম নেতাদের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি সংস্কারমূলক আন্দোলন গড়ে উঠে। এসব আন্দোলনের মধ্যে সংস্কারমূলক আন্দোলন হিসেবে ফরায়েজি আন্দোলন অন্যতম। এ আন্দোলনের মূল দার্শনিক ভিত্তি হলো একনিষ্ঠভাবে কুরআন শরিফের নির্দেশ পালন করা।
সমাজসংস্কারে ফরায়েজি আন্দোলনের অবদান নিম্নে সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রে ফরায়েজি আন্দোলনের অবদান উল্লেখ করা হলো-
১. কুসংস্কার দূরীকরণ-
সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রে হাজী শরীয়তউল্লাহর ফরায়েজি আন্দোলনের অবদান অপরিসীম। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ইসলাম ধর্মের আদর্শের মানুষকে অনুপ্রাণিত করা এবং কুসংস্কার দূর করা।
২. একেশ্বরবাদ ও সাম্যবাদের আদর্শ প্রতিষ্ঠা-
মুসলমানদের ব্যাপক সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে ফরায়েজি আন্দোলনের মাধ্যমে ইসলামের একেশ্বরবাদ বানানো ও সাম্যবাদের মহান আদর্শ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। সমাধি সৌধ নির্মাণ, মহররমের তাজিয়া বানানো, ওরশ, শিশুর জন্মদিনের উৎসব, বিয়েতে অহেতুক বেশি অর্থের অপচয়, হিন্দুদের পূজাপার্বণে মুসলমান সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ ইত্যাদি কার্যাবলি ইসলামবিরোধী বলে ঘোষণা করেন। মুসলমান সমাজের তিনি আশরাফ আতরাফ প্রথার বিলোপসাধন করেন। ইসলামের মহান আদর্শে বলীয়ান হয়ে অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুসলমান জাতিকে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান করেন।
৩. ধর্মীয় সংস্কার-
ফরায়েজি আন্দোলনের মাধ্যমে মুসলি সমাজে অনুপ্রবেশকারী বিভিন্ন কুসংস্কার, শিরক ও বিদআর মূলোৎপাটন করা হয়। মুসলিম সমাজের প্রচলিত বিভিন্ন কুসংস্কার। রয়েছে। যেমন- কবরপূজা, পিরপূজা, পির মুরিদ ও আশরাফ আতরাফ সম্পর্ক, পিরের দোহাই দেয়া প্রভৃতি। এ আন্দোলনের মূল লক্ষ্যই ছিল মুসলমান সমাজকে কুসংস্কারমুক্ত করে একেশ্বরবাসে। সকলকে উদ্বুদ্ধ করা, যাতে তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনে দেবদেবী, কবরপূজা, সেজদা করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকে।
উপসংহার-
ফরায়েজি আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি ইংরেজ, নীলকর, জমিদার গোষ্ঠীর অত্যাচার প্রতিরোধ ও বৈষম্য দূর করার প্রচেষ্টা চালান। ইংরেজদের শাসনের অবসান ও মুসলমানদের রাজনৈতিক কর্তত্ব প্রতিষ্ঠা করাই ছিল এ আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য। ফরায়েজি আন্দোলন বাঙালির ইতিহাস কেবল ধর্মসংস্কার আন্দোলন কিংবা রাজনৈতির সংগ্রামই নয়, এটি সরাসরি সমগ্র জনগণকে আত্মসচেতনতাবোধ জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে পরিচালিত করা হয়েছিল।
96 টি প্রশ্ন
95 টি উত্তর
0 টি মন্তব্য
2 জন সদস্য