- সমাজকর্ম প্রশাসনের নীতিমালা বিস্তারিত আলোচনা করো?
- অথবা, সমাজকর্ম প্রশাসনের নীতিমালা উল্লেখ করো?
সামাজিক প্রশাসন বা সমাজকর্ম প্রশাসন পেশাদার সমাজকর্মের একটি অন্যতম সহায়ক পদ্ধতি। এটি সমাজকল্যাণ সংস্থার কার্যক্রমের সাথে সম্পর্কিত। সমাজকর্ম প্রশাসন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া যায় মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা প্রণয়ন, নীতিনির্ধারণ, কার্যক্রম পরিচালনা, দায়িত্ব বণ্টন, সমন্বয়সাধন এবং মূল্যায়ন করা হয়। আর সামাজিক প্রশাসনের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সামাজিক নীতি বাস্ত বায়নে সামাজিক সর্বাধিক কল্যাণ নিশ্চিত করা। মূলত সামাজিক নীতির বাস্তবায়নে সামাজিক প্রশাসন বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
প্রত্যেক পদ্ধতিরই নির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা থাকে। সমাজকর্মের একটি সহায়ক পদ্ধতি হিসেবে সমাজকর্ম প্রশাসনেরও সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা রয়েছে। নিম্নে সমাজকর্ম প্রশাসনের নীতিমালাগুলো আলোচনা করা হলো-
১. যুগোপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়ন-
যুগোপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়ন সমাজকর্ম প্রশাসনের একটি অন্যতম নীতি। কারণ যুগোপযোগী নীতিমালার মাধ্যমেই সমাজের সমস্যা সম্পর্কে ধারণা অর্জন এবং কার্যকরী সমাধান প্রদান করা সম্ভব হয়। একমাত্র যুগোপযোগী নীতিমালার মাধ্যমেই সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব।
২. গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া: সমাজকর্ম সর্বদা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী। সমাজকর্ম কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন নির্ভর করে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে। তাই সামাজিক প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করে থাকে। এ প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ সর্বোচ্চ পর্যায়ের হয়ে থাকে।
৩. দায়িত্ব নির্ধারণ: সামাজিক প্রশাসন সর্বদা দায়িত্ব নির্ধারণে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দেয়। কারণ দক্ষ কর্মী সব সময়ই কর্মসূচি পরিচালনায় অদক্ষ কর্মীর তুলনায় অধিক ও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। সুতরাং যোগ্যতার ভিত্তিতে দায়িত্ব প্রদান সমাজকর্ম প্রশাসনের অন্যতম একটি নীতি।
৪. তত্ত্বাবধান: সামাজিক প্রশাসক কার্যকর করতে সঠিক তত্ত্বাবাধন নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফারুণ কার্যকর তত্ত্বাবধানের উপর কর্মসূচির সফলতা ও বিফলতা নির্ভর করে। এ নীতির মাধ্যমে একজন ব্যক্তি কর্তৃক সর্বোচ্চ কতজনকে তত্ত্বাবধান করা হবে তা নিরূপিত হয়।
৫. নমনীয়তা নীতি- সামাজিক প্রতিষ্ঠান বা এজেন্সিগুলো অতীত কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। আর এজন্য সামাজিক প্রশাসনকে সামাজিক কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নমনীয়তার নীতি অনুসরণ করতে হয়। এর মাধ্যমে কর্মসূচির ইতিবাচক ফলাফল প্রকাশ পায়।
৬. জনসমর্থন নীতি- সমাজকর্ম প্রশাসনের প্রশাসক সর্বদা কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে জনসমর্থন নীতিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। কারণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে জনগণের সমর্থন ও ইচ্ছা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাই সমাজকর্ম প্রশাসনের অন্যতম একটি নীতি।
৭. সম্পদের সদ্ব্যবহার- কর্মসূচি বাস্তবায়নে জনগণের সম্পদের সদ্ব্যবহার অতি জরুরি। আর সমাজকর্মের লক্ষ্যার্জনে সামাজিক প্রশাসন সর্বদা সম্পদের সদ্ব্যবহারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করে থাকে।
৮. সমন্বয়: সমন্বয় নীতি সামাজিক প্রশাসনের অন্যতম একটি নীতি। এ নীতির মাধ্যমে সামাজিক প্রশাসন সরকারি-বেসরকারি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। আর সমন্বয়ের মাধ্যমে সমাজের সর্বাধিক কল্যাণ নিশ্চিত হয়।
৯. যোগাযোগ: সমাজকর্ম প্রশাসনের একটি মৌলিক নীতি হচ্ছে যোগাযোগের নীতি। যোগাযোগ নীতির মাধ্যমেই সামাজিক প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, এজেন্সি, কর্তৃপক্ষ ও জনগণের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে এবং কর্মসূচি বাস্তবায়নে অনেকখানি এগিয়ে যায়।
১০. ভারসাম্য- ভারসাম্য নীতি যেকোনো কার্যক্রমের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানের সকল দিকে ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়। এটি সমাজকর্ম প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি।
১১. ব্যক্তির মর্যাদার স্বীকৃতি- সামাজিক প্রশাসন সর্বদা ব্যক্তির মর্যাদাকে সম্মান করে। এক্ষেত্রে ব্যক্তির নিজস্ব গুণাবলিকে প্রাধান্য দেয় এবং চাহিদা ও সার্মথ্য অনুযায়ী উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালায়।
১২. মূল্যায়ন: মূল্যায়নের মাধ্যমেই কোনো কর্মসূচির সফলতা ও বিফলতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সমাজকর্ম প্রশাসনের একটি নীতি হিসেবে প্রতিটি কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে মূল্যায়ন করা হয়। এর মাধ্যমে প্রকল্প সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা আর্জন সম্ভব হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সামাজিক প্রশাসন উল্লিখিত নীতিমালার আলোকে পরিচালিত হয়ে থাকে এ সকল নীতির আশ্রয় নিয়ে সমাজকর্ম প্রশাসন সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়ন এবং সেগুলোর সফল বাস্তবায়ন অনিশ্চিত করে থাকে। মূলত উল্লিখিত নীতিসমূহ প্রশাসক, প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রভৃতিকে স্বনির্ভর করার সুযোগ সৃষ্টি করে।
10 টি প্রশ্ন
10 টি উত্তর
0 টি মন্তব্য
2 জন সদস্য