- সমাজকর্ম গবেষণার গুরুত্ব উল্লেখ করো?
- অথবা, সমাজকর্ম গবেষণার প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করো?
ভূমিকা-
সমাজকর্মের সহায়ক পদ্ধতিগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি পদ্ধতি হলো সামাজিক গবেষণা। সামাজিক গবেষণার মাধ্যমে সমাজের কোনো বিষয়ের সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা অর্জন করা যায়। সামাজিক গবেষণা ছাড়া সমাজকল্যাণমূলক কোনো কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সামাজিক গবেষণার মাধ্যমেই সমাজস্থ মানুষের অবস্থা, প্রকৃতি, সমস্যা, সমস্যার কারণ, সম্পদ, সীমাবদ্ধতা, সুযোগ প্রভৃতি সম্পর্কে সাম্যক ধারণা পাওয়া যায় এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার ফলপ্রসূ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা যায়।
সমাজকর্ম গবেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। নিম্নে সমাজকর্ম গবেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো-
১. সমাজ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ-
সমাজ সম্পর্কে সুশৃঙ্খল ও ধারাবাহিক জ্ঞানলাভের জন্য সামাজিক বা সমাজকর্ম গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম। সমাজকর্ম গবেষণা সমাজের বিভিন্ন বিষয় বা ইস্যু সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা অর্জন করে সমাজের মানুষকে অবগত করে। এর মাধ্যমে জনগণ সমাজ সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞানার্জন করতে পারে।
২. নির্ভরযোগ্য তথ্যসংগ্রহ-
যেকোনো ধরনের নীতি বা পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রধান শর্ত হচ্ছে নির্ভরযোগ্য তথ্যের প্রাপ্যতা। সামাজিক গবেষণার মাধ্যমেই সমাজের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানা যায় এবং প্রয়োজনীয় এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়। সুতরাং নির্ভরযোগ্য তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে সামাজিক গবেষণার গুরুত্ব অত্যধিক।
৩. সমাজকর্ম পেশার উন্নয়ন-
সমাজকর্মকে পেশার মর্যাদা পেতে হলে এর সামগ্রিক ব্যবস্থায় উন্নয়ন জরুরি। সামাজিক গবেষণা সমাজকর্ম পেশার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সামাজিক গবেষণার মাধ্যমে সমাজস্থ সমস্যা, সমস্যার প্রাকৃতি, কারণ, সীমাবদ্ধতা, সুযোগ প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা অগুনি করা যায় যেটি সমায়াকর্ম পেশার উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪. সমস্যা নির্ণয় ও বিশ্লেষণ-
সমাজকর্মের অন্যতম উদেশ্য হচ্ছে সমস্যার প্রকৃতি নির্ণয় ও বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করা। সামাজিক গবেষণা এক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অমিতা পালন করতে পারে। সামাজিক গবেষণার মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন সমস্যার প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এবং বিচার-বিশ্লেষণ করা অনেকাংশে সহজ হয়।
৫. সামাজিক সমস্যা সমাধান-
সামাজিক সমস্যা মোকাবিলায় সামাজিক গবেষণা সমাজকর্মকে সর্বোচ্চ সহায়তা করে থাকে। সামাজিক গবেষণার মাধ্যমে সামাজিক সমস্যার সমস্যা সমাধানে জনগণের সম্পদ ও সুযোগ, রাষ্ট্রীয় সহায়তা প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এবং সামাজিক সমস্যার সমাধান প্রদানও সহজ হয়।
৬. সামাজিক আইন প্রণয়ন-
সামাজিক আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সামাজকর্ম গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ সমাজকর্ম গবেষণার মাধ্যমে সমাজের সমস্যা সমাধানে কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে তার একটি নির্দেশনা পাওয়া যায়।
৭. সমাজকর্ম পদ্ধতির উন্নয়ন:
সমাজকর্ম পদ্ধতির উন্নয়নে। সামাজিক গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সামাজিক গবেষণার মাধ্যমে সমাজের জনগণের চাহিদা ও প্রাপ্তির মধ্যে যে দূরত্ব সে সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে যা সমাজকর্ম পদ্ধতির উন্নয়নে আবশ্যক।
৮. সচেতনতা সৃষ্টি-
সামাজিক গবেষণা সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সামাজিক গবেষণা অসুবিধাগ্রস্ত শ্রেণির স্বার্থ রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে প্রশাসনকে উদ্যোগী করে তোলে।
৯. সামাজিক প্রশাসন পরিচালনা-
সামাজিক প্রশাসন পরিচালনায় সামাজিক গবেষণা প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করে থাকে। গবেষণার মাধ্যমে সামাজিক প্রশাসন তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ধারণা পেয়ে থাকে।
১০. কল্যাণমূলক কর্মসূচি প্রণয়ন-
সমাজের কল্যাণমূলক কর্মসূচি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সামাজিক গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে সামাজিক গবেষণা বাস্তব অবস্থা, চাহিদা, সুযোগ, সম্পদ, সীমাবদ্ধতা প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে কল্যাণমূলক কর্মসূচি প্রণয়নে সহায়তা করে।
১১. সেবার মানোন্নয়ন-
সামাজিক গবেষণা শুধুমাত্র সেবাপ্রদানে সহায়তা করে তা নয় এটি সেবার মানোন্নয়নেও যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। সমাজে কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নের পর সেটি কতোটা ফলপ্রসূ হলো বা জনগণ কতোটা উপকৃত হলো তা সামাজিক গবেষণার মাধ্যমে তা জানা যায়।
পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজকর্মের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সামাজিক গবেষণা অপরিহার্য। একমাত্র সামাজিক গবেষণার মাধ্যমেই সমাজের প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠে।আর এর মাধ্যমে সমাজের প্রয়োজন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট, দিক-নির্দেশনা পাওয়া যায়। ফলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়। সুতরাং সমাজকর্মের সমাজকর্ম গবেষণ্য বা সামাজিক।
10 টি প্রশ্ন
10 টি উত্তর
0 টি মন্তব্য
2 জন সদস্য