ভূমিকা-
মনোবিজ্ঞান হলো মানুষের আচরণ সম্পর্কিত বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের যেসব শাখার আলোচ্য বিষয় গবেষণার মাধ্যমে। ক্রমাগতভাবে পরিবর্তিত হয়, তাদের মধ্যে মনোবিজ্ঞান অন্যতম মূলত মনোবিজ্ঞান শব্দটি খ্রিস্টীয় দশ শতকে সাহিত্য ও দর্শনশাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন পরিবেশ পরিস্থিতিতে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর আচরণ-আচরণের কারণ এবং আচরণ নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি বিষয় মনোবিজ্ঞানে উন্মোচিত হয়েছে।
মনোবিজ্ঞানের সংজ্ঞা-
যে বিজ্ঞান মানুষের আত্মা বা মন সম্পর্কীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করে তাকে মনোবিজ্ঞান বলে অন্যভাবে বলা যায়, মনোবিজ্ঞান হচ্ছে আচরণ সম্পর্কিত এমন একটি বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান, যা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর আচরণ, মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, গতিপ্রকৃতি, শ্রেণিবিভাগ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা করে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা: মনোবিজ্ঞানীগণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মনোবিজ্ঞানকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে কয়েকজন মনোবিজ্ঞানীর সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো-
গ্রিক দার্শনিক প্লেটো-এর মতে, "মনোবিজ্ঞান হলো আত্মা সম্পর্কীয় বিজ্ঞান।"
জন. এল. ভোগেল বলেন, "মনোবিজ্ঞান হলো আচরণ ও অভিজ্ঞতার বিজ্ঞানসম্মত অনুধ্যান মানুষের সমস্যায় সে জ্ঞানের প্রয়োগ।"
উইলিয়াম জেমস-এর মতে, "মনোবিজ্ঞান হলো মানসিক পরিমাপগুলোর বিজ্ঞান এবং এ পরিমাপগুলোর বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে রয়েছে- অনুভূতি, ইচ্ছা, জ্ঞান ও প্রক্রিয়া, যুক্তি, সিদ্ধান্ত ইত্যাদি।
মনোবিজ্ঞানী জে. বি. ওয়াটসন বলেন, "মনোবিজ্ঞান হলো মানুষ ও প্রাণীর আচরণের বিজ্ঞান।”
সমাজকর্মীর জন্য মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানের আবশ্যকতা:-
সমাজকর্ম একটি ব্যবহারিক সামাজিক বিজ্ঞান। মানুষকে যথাযথভাবে সাহায্য করতে চাইলে সমাজকর্মীর আচার-আচরণ সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা ও বোঝা দরকার। আর মানুষের আচার-আচরণ সম্পর্কে জানতে হলে সমাজকর্মীকে মনোবিজ্ঞানের অধ্যয়ন করতে হয়। নিম্নে সমাজকর্মীরা মনোবিজ্ঞান পাঠের আবশ্যকতা আলোচনা করা হলো-
১. সমাজকর্ম ও মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানা:-
মনোবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে মানুষের আচরণ। সমাজকর্ম ও মানুষের আচার-আচরণ নির্ধারণ করে মানুষের সমস্যার সমাধান করে থাকে। এজন্য সমাজকর্ম মানব আচরণের প্রতি অধিক গুরুত্ব দেয়। সুতরাং সমাজকর্মের বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে হলে সমাজকর্মীকে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান আহরণ করতে হয়।
২. সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্রে মানুষের আচার নিয়ন্ত্রণের আলোকে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটায় সমাজকর্মী মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণে উদ্দেশ্য সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটায়। এক্ষেত্রে সমাজকর্মীকে মনোবিজ্ঞান পাঠ করার প্রয়োজন হয়।
৩. সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে: সমাজকর্মী সমস্যা-সমাধানের ক্ষেত্রে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে থাকে। ধাপগুলো হলো মনো সামাজিক তথ্যসংগ্রহ, সমস্যা নির্ণয়, সমাধান ইত্যাদি। আর এ ধাপগুলো মনোবিজ্ঞানের সাথে জড়িত। তাই সমাজকর্মীর মনোবিজ্ঞান বিষয়ে পাঠ করা অত্যন্ত জরুরি।
৪. সমস্যা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে সমাজকর্মী ব্যক্তিরা সমস্যা সমাধানের পূর্বে তার কারণ, উৎস, প্রকৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে। অর্থাৎ সমস্যাকে বিশ্লেষণ করে। সমস্যাকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখে অধিকাংশ সমস্যাই মনস্তাত্ত্বিক। এর ফলে সমাজকর্মীকে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জন করতে হয়।
৫. পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণ:
সমাজের কল্যাণে মানুষের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ একান্ত অপরিহার্য। সমাজকর্মীরা মনোবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে মানুষের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে পারে এবং তা নিয়ন্ত্রণও করতে পারে। এজন্যই সমাজকর্মীকে মনোবিজ্ঞান পাঠ করতে হয়।
৬. কর্মসূচি গ্রহণ:
সমাজকর্ম সমাজের মানুষের সার্বিক কল্যাণসাধনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। এর মধ্যে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক দিকও অন্তর্ভুক্ত থাকে। তাই কর্মসূচি গ্রহণ করতে হলে মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে হয়।
৭. চিকিৎসার ক্ষেত্রে:
সমাজকর্মীর কাছে যখন সাহায্যপ্রার্থী আসে, তখন সে মূলত মানসিক অস্থিরতায় ভুগতে থাকে। কারণ সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসা করতে হলে মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে সুস্থ করতে হয়। এজন্য সমাজকর্মীকে মনোবিজ্ঞান পাঠ করতে হয়। অবশ্য এজন্য সমাজকর্মের একটি বিশেষ কর্মসূচি আছে, যা 'মনস্তাত্ত্বিক সমাজকর্ম' নামে পরিচিত।
৮. সামাজিক ভূমিকা পালন-
মানুষ যখন তাদের মৌল মানবিক চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করতে পারে না, তখন সে হতাশ হয়ে পড়ে এবং সমাজ সম্পর্কে উদাসীন হয়ে পড়ে। এ অবস্থার যথাযথ ব্যাখ্যা মনোবিজ্ঞান দিয়ে থাকে। যার ফলে মানুষের হতাশা দূর করে তাকে সামাজিক ভূমিকা পালনে সক্ষম করে তোলে।
উপসংহার-
পরিশেষে বলা যায়, সমাজকর্মকে পেশাগত মর্যাদা লাভে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান অপরিহার্য। মানুষের ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান সমাজকর্মীকে সঠিক নির্দেশনা দিয়ে তাকে। এজন্য সমাজকর্মীকে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জন করতে হয়।