সাম্প্রতিক প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ

0 টি ভোট
ভূমিষ্কাস রোধে গৃহীত পূর্বপ্রস্তুতিমূলক কার্যকর পদক্ষেপ লিখ?

ভূমিধ্বস রোধে গৃহিত পূর্বপ্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো-

  • ১) ভূমিধ্বাসপ্রবণ এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।
  • ২) সম্ভব হলে পাহাড়ি এলাকায় মানব বসতি ও আর্থসামাজিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
  • ৩) পাহাড়ধ্বসে আগাম সংকেত প্রদান এবং আগাম কার্যক্রমে আত্মবিভাগীয় সমন্বয় জোরদার করা।
  • ৪) পাহাড়ি এলাকায় ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা তৈরি করা, যার মাধ্যমে যেখানে যে ধরনের কাঠামো প্রয়োজন হবে সেখানে সেরূপ কাঠামো নির্মান করা।
  • ৫) পাহাড়ি এলাকায় পরিকল্পিত নিবিড় বনায়ন প্রতিষ্ঠা।
  • ৬) উদ্ধার কাজে অংশগ্রহনকারীদের চিহ্নিত করে প্রযোজনীয় প্রশিক্ষণ ও দায়িত্ব প্রদান করা এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রাহে রাখা।
  • ৭) আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহকে দায়িত্ব ও আইনানুগ অধিকার দিতে হবে যাতে তারা তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
0 টি ভোট
ফার্মের প্রানির বৈশিষ্ট্য বলতে কি বুঝায়?

ফার্ম প্রাণির বৈশিষ্ট্য বলতে গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি বা অন্যান্য খামারের প্রাণীর নির্দিষ্ট জিনগত এবং শারীরিক গুণাবলীকে বোঝায়, যা তাদের উৎপাদনশীলতা, প্রজনন ক্ষমতা, অভিযোজন ক্ষমতা এবং স্বাস্থ্যের বৈশিষ্ট্যকে বুঝায়। এই বৈশিষ্ট্যগুলো বংশগত এবং পরিবেশগত উভয় কারণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং প্রাণীর কর্মক্ষমতা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উদাহরণ-

  • উৎপাদনশীল বৈশিষ্ট- 

দুধ উৎপাদন, মাংসের জন্য।

  • প্রজনন বৈশিষ্ট্য- 

বাচ্চা দেওয়ার হার, বয়ঃপ্রাপ্তির সময়।

  • অভিযোজন বৈশিষ্ট্য-

তাপ সহনশীলতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

0 টি ভোট
বাংলাদেশের ফার্মের প্রাণির গুরুত্ব কি?

অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষি স্থায়িত্ব ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদের বৈশিষ্ট্যগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১. অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা-

গবাদি পশুর বৈশিষ্ট্য যেমন বৃদ্ধির হার, দুধ উৎপাদন, মাংসের গুণমান এবং প্রজনন দক্ষতা সরাসরি পশুপালন করার মুনাফাকে প্রভাবিত করে। উন্নত বৈশিষ্ট্য উচ্চ ফলন এবং উন্নত মানের পণ্য তৈরী করে যা কৃষকদের আয় এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে।

২. খাদ্য নিরাপত্তা-

দুধ, মাংস এবং ডিমের পরিমাণ এবং গুণমানকে প্রভাবিত করে এমন বৈশিষ্ট্যগুলি একটি স্থিতিশীল এবং পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে উচ্চ ফলনশীল এবং রোগ প্রতিরোধী পশুসম্পদ উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখতে পারে।

৩. জলবায়ুর সাথে অভিযোজন-

 বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় এবং প্রায়শই চ্যালেঞ্জিং জলবায়ু পরিস্থিতিতে গবাদি পশুর স্বাস্থ্য এবং উৎপাদনশীলতা বজায় রাখার জন্য তাপ সহনশীলতা এবং রোগ প্রতিরোধের মতো স্থানীয় পরিবেশের সাথে সহনশীল বৈশিষ্ট্যগুলি পরিহার্য এবং গুরুত্বপূর্ণ।

৪. জেনেটিক উন্নতি-

 বংশগত বৈশিষ্ট্যের জন্য বাছাই (selective) প্রজনন উন্নত পশুসম্পদ প্রজাতির দিকে পরিচালিত করে যেগুলি রও বেশি উৎপাদনশীল, শক্ত এবং স্থানীয় চাষ পদ্ধতির জন্য উপযুক্ত। এটি আমদানি করা জাতের উপর ভরতা কমাতে পারে এবং স্থানীয় গবাদি পশু পালনের স্থায়িত্ব বাড়াতে পারে।

৫. টেকসই কৃষি-

 টেকসই গবাদি পশু চাষের পদ্ধতির প্রচারের জন্য দক্ষ ফিড রূপান্তর এবং পরিবেশগত প্রভাব হ্রাসে (যেমন, কম ঘেন নির্গমন) অবদান রাখে এমন বৈশিষ্ট্যগুলি গুরুত্বপূর্ণ। এটি পরিবেশ সংরক্ষণের সাথে কৃষি উৎপাদনশীলতার ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।

৬. সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মূল্য-

কিছু পশুসম্পদ বৈশিষ্ট্যের সাংস্কৃতিক তাৎপর্য রয়েছে এবং সামাজিক প্রথাকে প্রভাবিত করে। উদাহরণ স্বরূপ, ঐতিহ্যগত অনুষ্ঠানের জন্য বা সামাজিক মর্যাদার প্রতীক হিসেবে নির্দিষ্ট জাত পছন্দ করা হয় যা গবাদি পশুর প্রজনন এবং ব্যবস্থাপনাকে প্রভাবিত করে।

0 টি ভোট
উপসহকারী পদের জন্য পরীক্ষার প্রস্তুতি কিভাবে নিবো?

উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে উপসহকারী কর্মকর্তা নিয়োগের পরীক্ষার প্রস্তুতির পড়াশোনা।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি -

প্রিলির জন্য বই-

১. উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগ বই

২. সকল প্রাইমারী প্রশ্ন- বাদ যাবে- ম্যাথ, ইংরেজি লিখিত, কম্পিউটার 

৩. বিসিএস এর প্রশ্ন- বাংলা, সাহিত্য, ইংরেজি ব্যাকরণ।

প্রোফেসারের জব সলেশন।

লিখিত এর জন্য বই- পূর্বের মতোই তবে এগুলা ৪০+৪০+৪০+৮০ নম্বরের জন্য পড়তে হবে।

সাধারণ জ্ঞানের বই পড়তে হবে- বাংলা, আন্তর্জাতিক ও খেলাধুলা বিষয়ক।

ভাইভা এর জন্য -

প্রথমে স্যারকে সালাম দিয়ে উনার থেকে অনুমতি নিয়ে ভাইভা বোর্ডে প্রবেশ করবেন।এরপর শান্তশিষ্টভাবে রুমে ঢুকে স্যার বসতে বললে চেয়ারে ধীরে সুস্থে বসবেন।তখন স্যার আপনাকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন করবে।

নিজের সম্পর্কে জানতে হবে- নাম, নামের অর্থ, নাম দিয়ে বিখ্যাত বা কুখ্যাত ব্যক্তি, তাদের অবদান, বাবা-মা এর নাম, সেইম।

নিজের সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে হবে, নিজের ভালো ও খারাপ গুণ বলেন, কেন চাকরি করবেন? হালাল টাকার জন্য, 

নিজ জেলার নাম- নামকরণের ইতিহাস, উপজেলা ও নামকরণ এর ইতিহাস, ইউনিয়ন ও গ্রাম সেইম।

আপনার এলাকার বিখ্যাত কি, বিখ্যাত খাবার, বিখ্যাত ও কুখ্যাত ব্যক্তি, মুক্তিযুদ্ধের সময় এলাকা কয় নম্বর সেক্টরের ছিল, সেক্টর কমান্ডার কে ছিলেন, 

নিজের এক্সট্রা কারিকুলাম একটিভিটিস- ক্রিকেট বা ফুটবল নিয়ে বিস্তারিত, গান পারেন নাকি? একটা দেশাত্মবোধক গান (আমি বাংলায় গান গাই বা ও আমার দেশেট মাটি) , নজরুল ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গীত শিখতে হবে, এলাকার বিখ্যাত কোনো গান।যেমন- রংপুরের ভাওয়াইয়া গান।

বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে জানতে হবে বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ের উন্নয়ন নিয়ে।২৪শের আন্দোলনের সময়, কয়জন প্রধান সম্মনায়ক ও নাম।সাবজেক্টিভ পড়া, যেমন- কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তার জন্য, লাইভস্টক বা ইন্জিনিয়ারিং বিষয়ক।

সাধারণ জ্ঞান নিয়ে টুকিটাকি পড়তে হবে।যেমন- আন্তর্জাতিক বিষয়গুলা, বিভিন্ন দেশের রাজধানী, মুদ্রা, দেশের সাম্প্রতিক বিষয়াবলি, ক্রিকেট ও ফুটবল নিয়ে জানতে হবে।

আপনার টাইয়ের গিটুর নাম কি? নট (Knot)। 

কোনো কিছু খেতে দিলে, খাওয়ার সময় শব্দ যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা এবং পানি পান করার সময় ধীরে ধীরে পান করা।আর খাবারের জন্য ভাইভা বোর্ডের স্যারকে ধন্যবাদ দেওয়া।মেয়েদের ক্ষেত্রে উঁচু হিল ও ম্যাক-আপ বেশি না করা।

২৪শে গণঅভ্যুত্থানের বইয়ের নাম জানতে হবে।

0 টি ভোট
পশু বাছাই এর নির্ণায়ক বা মানদণ্ড কি কি?

১. বংশগতি-

পশুর পূর্বপুরুষের উৎপাদনশীলতা

উচ্চ উৎপাদনশীল বংশের পশু নির্বাচন।

২. শারীরিক গঠন-

দুধের জন্য- উন্নত স্তন, সঠিক গঠন, এবং শক্তিশালী শারীরিক কাঠামো।

মাংসের জন্য- পেশীবহুল শরীর, ভালো অঙ্গবিন্যাস, এবং মাংসের সঠিক বিন্যাস।

পশমের জন্য- ঘন এবং উচ্চ মানের পশম।

৩. স্বাস্থ্য (Health)-

পশু রোগমুক্ত হতে হবে।

চোখ, নাক, মুখ পরিষ্কার থাকতে হবে।

ত্বক ও পশম সুস্থ থাকতে হবে।

পশুর চলন স্বাভাবিক হতে হবে।

8. বয়স (Age)-

প্রজনন এবং উৎপাদনের জন্য সঠিক বয়সের পশু নির্বাচন করা হয়।

সাধারণত, অল্প বয়স্ক পশু নির্বাচন করা হয় যাতে তারা দীর্ঘকাল উৎপাদন দিতে পারে।

৫. প্রজনন ইতিহাস (Reproductive History)-

গাভীর ক্ষেত্রে, পূর্বের প্রসবের সংখ্যা এবং কোনো প্রজনন সমস্যা ছিল কিনা তা দেখা হয়।

ষাঁড়ের ক্ষেত্রে, শুক্রাণুর গুণমান এবং প্রজনন ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়।

৬. উৎপাদন রেকর্ড (Production Records)-

দুধ, মাংস, ডিম, বা পশমের পরিমাণ এবং গুণমান পরিমাপ করা হয়।

পূর্বের উৎপাদনের রেকর্ড বিশ্লেষণ করে পশু নির্বাচন করা হয়।

৭. অভিযোজন ক্ষমতা (Adaptability)-

পশুটি স্থানীয় পরিবেশ এবং জলবায়ুর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হতে হবে।

৮. আচরণ (Temperament)-

শান্ত এবং সহজে নিয়ন্ত্রণযোগ্য পশু নির্বাচন করা হয়।

0 টি ভোট
পশু বাছাই এর উদ্দেশ্য এবং ক্রাইটেরিয়া কি?

বাছাইয়ের উদ্দেশ্য-

  • উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি- বেশি দুধ, মাংস, ডিম, বা পশম উৎপাদনের জন্য পশু বাছাই করা হয়।
  • স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা- রোগমুক্ত এবং শক্তিশালী পশু নির্বাচন করা হয়।
  • প্রজনন ক্ষমতা- ভালো প্রজনন ক্ষমতার অধিকারী পশু বাছাই করা হয়, যা বংশবৃদ্ধিতে সহায়ক।
  • শারীরিক গঠন ও বৈশিষ্ট্য- একটি নির্দিষ্ট জাতের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পশু নির্বাচন করা হয়।
  • অর্থনৈতিক উন্নতি-
  • খামার ব্য পশুপালনের মাধ্যমে লাভজনকতা বৃদ্ধি করা।
0 টি ভোট
বাছাই কাকে বলে?

পশুকে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন করা করাকে বাছাই বলে।

0 টি ভোট
দুধের ভেজাল সনাক্ত করার পদ্ধতি লিখ?

জনসাধারণের দ্বারা খাওয়া দুগ্ধজাত পণ্যের নিরাপত্তা এবং গুণমান নিশ্চিত করার জন্য দুধে ভেজাল সনাক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুধে বিভিন্ন ধরনের ভেজাল সনাক্ত করতে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এখানে কিছু সাধারণ সনাক্তকরণ পদ্ধতি রয়েছে-

দুধের ভেজাল চেনার উপায় -

  • বিকারক পরীক্ষা-

দুধে হাইড্রোজেন পারক্সাইড (H2O2) যোগ করলে ইউরিয়া বা অন্যান্য নাইট্রোজেনাস যৌগের উপস্থিতি নির্দেশ করতে পারে। একইভাবে, মিথিলিন ব্লু যোগ করলে ফরমালিনের উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়, যা দুধের শেলফ লাইফ বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত একটি সাধারণ সংরক্ষণকারী।

  • টেস্ট কিট-

বাণিজ্যিকভাবে উপলব্ধ টেস্ট কিটগুলিতে রাসায়নিক বিকারক বা টেস্ট স্ট্রিপ থাকে যা দুধে নির্দিষ্ট ভেজাল সনাক্ত করতে পারে। এই কিটগুলি ব্যবহার করা সহজ এবং দ্রুত ফলাফল প্রদান করে।

  • সংবেদনশীল বিশ্লেষণ-

প্রশিক্ষিত প্যানেলিস্ট বা ভোক্তাদের দ্বারা সংবেদনশীল মূল্যায়ন দুধের স্বাদ, গন্ধ, রঙ বা টেক্সচারের পরিবর্তন সনাক্ত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ভেজাল বা নষ্ট হওয়ার ইঙ্গিত দিতে পারে।

  • অর্গণোলেপটিক পরীক্ষা-

চোখে দেখে দুধের পরীক্ষা করা। এর মাধ্যমে দুধের রং, গন্ধ কিংবা দুধে কোন অবাঞ্ছিত বস্তু আছে কিনা তা নির্ণয় করা যায়।

  • লেক্টোমিটার রিডিং-

 লেক্টোমিটার রিডিং এর মাধ্যমে দুধে যদি কোন ভেজাল দ্রব্য মেশানো থাকে তাহলে তা নির্নয় করা যায়। এছাড়া দুধ চর্বি মুক্ত করা কি না তাও এ টেস্টের মাধ্যমে বোঝা যায়।

  • রিজাজুরিন টেস্ট-

দুধে কি পরিমাণ ব্যাক্টেরিয়া আছে তা এ পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়।

  • বাটার ফ্যাট টেস্ট-

 বাটার ফ্যাট টেস্ট দ্বারা দুধের চর্বি নির্ণয় করা হয়। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর উপর ভিত্তি করে দুধের মূল্য পরিশোধ করা হয়। যে দুধের ফ্যাট যত বেশি তার মূল্য তত বেশি।

0 টি ভোট
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি লিখ?

ভূমিকা-

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় দেওয়ানি অধিকার লাভ করে ১৭৬৫ সালে। কতিপয় কর্মচারীর দুর্নীতির জন্য বাংলার ভাগ্যাকাশে নেমে আসে অন্ধকার। কারণ দেওয়ানি ক্ষমতা লাভের পর কোম্পানির কর্মচারীদের অত্যাচার, শোষণ, নির্যাতন বেড়েই চলে। তাই সংঘটিত হয় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। এসব কারণে ব্রিটিশ সরকার কোম্পানিকে দায়ী করে এবং ভারতবর্ষে নতুন একজন গভর্নর জেনারেল হিসেবে ওয়ারেন হেস্টিংসকে পাঠায়। হেস্টিংসের আমলে প্রথম রেগুলেটিং এ্যাক্ট পাস হয় যা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। এরপর ভারতে গভর্নর জেনারেল হয়ে আসেন লর্ড কর্নওয়ালিস। এ কর্নওয়ালিসের শাসনামলেই পূর্বের অনেক আলোচনা-সমালোচনার পর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ঘোষণা করা হয়।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি-

১৯৯৩ সালে চিরস্থায়ী নিম্নে আলোচনা করা হলে বন্দোবস্ত প্রবর্তিত হলেও এর সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত ছিল।

১. দাও-এর মতবাদ-

 কোম্পানি যখন ১৭৬৫ সালে দেওয়ানি লাভ করে তারপর বাংলার চরম অবস্থা উপলব্ধি করে সমস্যা সমাধানের জন্য শাসন সম্পর্কে দুজন পরামর্শদাতার নাম ইতিহাসে খ্যাত। এরা দুজন হলেন আলেকজান্ডার দাও ও হেনরি পেটুলো। আলেকজান্ডার দাও কোম্পানি শাসনকার্য পরিচালনার প্রতি উপহাস করে বলেন যে, নবাবি শাসননীতি ছিল "মধুর চাকের মধু খাওয়া, চাক ধ্বংস করা নয়, কিন্তু ইংরেজরা এর মধু খেয়ে মধুর চাক পর্যন্ত ধ্বংস করে দেয়।" তাই কোম্পানির অত্যাচারী শাসন থেকে বাংলার অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার পিজন্য তিনি ভূমি সংস্কারের পরামর্শ দেন। এতে তিনি বলেন-

  • (ক) বর্তমান বার্ষিক রাজস্ব হার বজায় রেখে সরকার কর্তৃক নগদ সেলামির পরিবর্তে ভূমি চিরস্থায়ীভাবে ব্যক্তিগত মালিকানায় ছেড়ে দেয়া।
  • (খ) একসাথে সমস্ত জমি বিক্রয়জনিত বাজার মূল্য হ্রাস এড়ানোর জন্য সরকার কর্তৃক সমগ্র ভূমির এক-চতুর্থাংশ বিক্রি করে চার বছরে বিক্রয়কার্য সম্পন্ন করা।
  • (গ) বিক্রয়লব্ধ টাকা সরকারি খাতে বিনিয়োগ করে সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধি করা।
  • (ঘ) জমিতে একটানা মালিকানা রোধ করার জন্য ভূমি নিয়ন্ত্রণের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেয়া।দাও এ মত দ্বারা বাংলার ঐতিহ্য ফিরে পাওয়া সম্ভব বলে মনে করতেন।

২. বার্ষিক জমিদারি বন্দোবস্তের কুফল-

ওয়ারেন হেস্টিংসের "আজীবন বন্দোবস্ত" ও ফিলিপ ফ্রান্সিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দুটো বোর্ড অব ডাইরেক্টরে বিবেচনার জন্য প্রেরণ করা হয়। কোর্ট উভয় পরিকল্পনাই আপাতত বর্জন করে এবং আদেশ দেয় যে, পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত সরকারের উচিত বার্ষিক মেয়াদে জমিদারদের সাথে ভূমি বন্দোবস্ত করা। ইজারা প্রথা পরিত্যাগ করে শুধু জমিদারদের সাথে ভূমি বন্দোবস্ত করার জন্য কোর্টের সিদ্ধান্ত ছিল ভূমিতে জমিদারিত্বের স্বীকৃতি। যদিও কোর্ট ফ্রান্সিসের পরিকল্পনাকে একটি অতি প্রশংসনীয় ব্যবস্থা বলে গ্রহণ করে তথাপিও তা কার্যকরী করা সম্ভব হয়নি। কারণ এর পশ্চাতে জানা দরকার- ১. স্থায়ী রাজস্ব ব্যবস্থা কি হওয়া উচিত। ২. গভর্নর জেনারেলের পরিকল্পনাকে পাস কাটিয়ে একজন কাউন্সিলরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের রাজনৈতিক অসুবিধা। তাই এটা কার্যকরী করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে না হলেও অনেকটা অবদান ছিল।

৩. চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জন্য ডাইরেক্টর সভার নির্দেশ-

পীটস ইন্ডিয়া এ্যাক্ট পাস হওয়ার পর বাংলার রাজস্ব সম্পর্কে কোম্পানি নীতি পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। এক্ষেত্রে দেখা যায়, বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত ইন্ডিয়া অফিসে বাংলার ভূমি ব্যবস্থা কি হওয়া উচিত এ নিয়ে এককভাবে চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই। হয়তো যোগ্যতাও নেই। এ ব্যাপারে যারা গভীর চিন্তা করেছিলেন তারা হলেন ফিলিপ ফ্রান্সিস, জন শো'র ও চার্লস স্টুয়ার্ট। এরা সবাই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রবক্তা ছিলেন। এমতাবস্থায় কোর্ট অব ডাইরেক্টরস তাদের সমস্ত পরিকল্পনা, স্মারকপত্র, চিঠিপত্রসমূহ সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, বাংলার জন্য একমাত্র চিরস্থায়ী বন্দোবস্তই কাম্য। ১৭৮৬ সালের ১১ এপ্রিল লেখা পত্রে কলকাতা কর্তৃপক্ষকে এ যুগান্ত কারী সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

৪. জন শো'র ও কর্নওয়ালিস বিতর্ক-

১৭৮৬ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কোর্ট অব ডাইরেক্টরস লর্ড কর্নওয়ালিসকে গভর্নর জেনারেল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কোর্ট চিরস্থায়ী বন্দোবস্তকে কার্যকরী করার জন্য কর্নওয়ালিসকে উপযুক্ত বলে মনে করেন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় কর্নওয়ালিসের/ প্রধান রাজস্ব উপদেষ্টা ও বোর্ড অব রেভিনিউর প্রেসিডেন্ট জন শোর। শোর যুক্তি দেখান যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কার্যকরী করার পূর্বে জানা দরকার।

  • (ক) জমিদার, তালুকদার ও রায়তের বর্তমান আর্থিক অবস্থা।
  • (খ) মুঘল শক্তির অবক্ষয়ের আগে জমিদার ও রায়তের অধিকার।
  • (গ) মুঘল শক্তির পতনের পর্বে রায়তের খাজনা সংক্রান্ত আইন ও রেওয়াজ।
  • (ঘ) দেওয়ানি লাভের পর জমিদার কর্তৃক আরোপিত নতুন আবওয়াব, মামথ ইত্যাদি।
  • (ঙ) সাধারণ রায়তের স্বার্থরক্ষার উপায়।
  • (চ) বর্তমান রাজস্ব ধার্য ব্যবস্থার ত্রুটিসমূহ ও তা দূর করার উপায়।
  • (ছ) ১৭৭২ সাল থেকে প্রত্যেক জমিদারি বিস্তারিত জমা, উশুল ও বাকি হিসেবে সংগ্রহ।

এরপর কর্নওয়ালিস আশা ব্যক্ত করেন যে, এখন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করা হবে। তবে একটু দেরি হয়।

৫. দশসালা বন্দোবস্ত কোর্ট অব ডাইরেক্টরস-

এর নির্দেশনামায় (১২ এপ্রিল, ১৭৮৫) বলা হয়েছিল যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের উদ্দেশ্যে একটি ক্ষণস্থায়ী বন্দোবস্ত করা হয়। কোর্টের অনুমোদন লাভের পর সেই স্বল্পমেয়াদি বন্দোবস্তই চিরস্থায়ী বলে ঘোষণা করা হবে। সে নির্দেশ মোতাবেক গভর্নর জেনারেল ইন কাউন্সিল ১৭৮৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বিহার প্রদেশের জন্য দশসালা বন্দোবস্তের প্রস্তাব করেন। এতে শোর ও কর্নওয়ালিসের মধ্যে বিতর্ক দেখা দেয়। এতে প্রস্তাব ছিল যে, "জমিদারদের সাথে বন্দোবস্ত করা হোক এবং নোটিশ জারি করা হোক যে, কোর্ট অব ডাইরেক্টরস কর্তৃক অনুমোদিত হলে তা চিরস্থায়ী বলে গণ্য হবে এবং দশ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর বন্দোবস্তে কোনো রদবদল হবে না।" এক পর্যায়ে বিতর্ক দেখা দেয় ঘোষণা নিয়ে। শেষে ১৭৮৯ সালে বিহার প্রদেশে দশসালা বন্দোবস্ত প্রবর্তন করা হয়। প্রস্তাবে বলা হয় যে, বাংলা সন ১১৯৭ সালের ১ বৈশাখ থেকে দশ বছরের জন্য জমিদারের সাথে ভূমি বন্দোবস্ত করা হোক। বন্দোবস্তের নাম দেয়া হয় দশসালা।

৬. কৃষি বিপ্লব ও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত-

কর্নওয়ালিস কৃষিক্ষেত্রে কিছুটা উন্নতি সাধন করে। জন শো'র ও কর্নওয়ালিসের বিতর্কের সমস্ত কাগজপত্র জমা দেন। সাথে সাথে দশসালা বন্দোবস্তের দলিলপত্রও জমা দেন। তারপর অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৭৯২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কোর্ট চূড়ান্ত নির্দেশ কর্নওয়ালিসকে জানায়। ১৭৯৩ সালে ২২ মার্চ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ঘোষণা করেন লর্ড কর্নওয়ালিস।

উপসংহার-

 পরিশেষে বলা যায় যে, লর্ড কর্নওয়ালিস প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ছিল ব্রিটিশ ভারতের কোম্পানি শাসনের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর ফলে সুদীর্ঘকাল ধরে ভারতে কোম্পানির রাজস্ব সম্পর্কে জামিদার ও সরকার জমিদার ও রায়ত ইত্যাদি সম্পর্কে যে জটিলতা ছিল তার অবসান হয়। এছাড়া এ বন্দোবস্তের মাধ্যমে প্রশাসনিক কাঠামোর পুনর্বিন্যাস করা হয়। এছাড়া এ বন্দোবস্তের প্রেক্ষাপট তথা পটভূমি ছিল একটি শোষণ ক্ষমতা দখল করার প্রয়াস যা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছিল।

0 টি ভোট
সমাজ সংস্কারে হাজী শরীয়তুল্লাহর অবদান লিখ?

ভূমিকা-

ব্রিটিশশাসিত ভারতে বিশিষ্ট হিন্দু-মুসলিম নেতাদের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি সংস্কারমূলক আন্দোলন গড়ে উঠে। এসব আন্দোলনের মধ্যে সংস্কারমূলক আন্দোলন হিসেবে ফরায়েজি আন্দোলন অন্যতম। এ আন্দোলনের মূল দার্শনিক ভিত্তি হলো একনিষ্ঠভাবে কুরআন শরিফের নির্দেশ পালন করা।

সমাজসংস্কারে ফরায়েজি আন্দোলনের অবদান নিম্নে সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রে ফরায়েজি আন্দোলনের অবদান উল্লেখ করা হলো-

১. কুসংস্কার দূরীকরণ-

সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রে হাজী শরীয়তউল্লাহর ফরায়েজি আন্দোলনের অবদান অপরিসীম। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ইসলাম ধর্মের আদর্শের মানুষকে অনুপ্রাণিত করা এবং কুসংস্কার দূর করা।

২. একেশ্বরবাদ ও সাম্যবাদের আদর্শ প্রতিষ্ঠা-

মুসলমানদের ব্যাপক সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে ফরায়েজি আন্দোলনের মাধ্যমে ইসলামের একেশ্বরবাদ বানানো ও সাম্যবাদের মহান আদর্শ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। সমাধি সৌধ নির্মাণ, মহররমের তাজিয়া বানানো, ওরশ, শিশুর জন্মদিনের উৎসব, বিয়েতে অহেতুক বেশি অর্থের অপচয়, হিন্দুদের পূজাপার্বণে মুসলমান সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ ইত্যাদি কার্যাবলি ইসলামবিরোধী বলে ঘোষণা করেন। মুসলমান সমাজের তিনি আশরাফ আতরাফ প্রথার বিলোপসাধন করেন। ইসলামের মহান আদর্শে বলীয়ান হয়ে অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুসলমান জাতিকে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান করেন।

৩. ধর্মীয় সংস্কার-

ফরায়েজি আন্দোলনের মাধ্যমে মুসলি সমাজে অনুপ্রবেশকারী বিভিন্ন কুসংস্কার, শিরক ও বিদআর মূলোৎপাটন করা হয়। মুসলিম সমাজের প্রচলিত বিভিন্ন কুসংস্কার। রয়েছে। যেমন- কবরপূজা, পিরপূজা, পির মুরিদ ও আশরাফ আতরাফ সম্পর্ক, পিরের দোহাই দেয়া প্রভৃতি। এ আন্দোলনের মূল লক্ষ্যই ছিল মুসলমান সমাজকে কুসংস্কারমুক্ত করে একেশ্বরবাসে। সকলকে উদ্বুদ্ধ করা, যাতে তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনে দেবদেবী, কবরপূজা, সেজদা করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকে।

উপসংহার-

ফরায়েজি আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি ইংরেজ, নীলকর, জমিদার গোষ্ঠীর অত্যাচার প্রতিরোধ ও বৈষম্য দূর করার প্রচেষ্টা চালান। ইংরেজদের শাসনের অবসান ও মুসলমানদের রাজনৈতিক কর্তত্ব প্রতিষ্ঠা করাই ছিল এ আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য। ফরায়েজি আন্দোলন বাঙালির ইতিহাস কেবল ধর্মসংস্কার আন্দোলন কিংবা রাজনৈতির সংগ্রামই নয়, এটি সরাসরি সমগ্র জনগণকে আত্মসচেতনতাবোধ জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে পরিচালিত করা হয়েছিল।

আরো দেখতে, প্রশ্নসমূহের পূর্ণ তালিকা এর জন্য ক্লিক করুন ।

96 টি প্রশ্ন

95 টি উত্তর

0 টি মন্তব্য

2 জন সদস্য

Questionbd❓ এ সুস্বাগতম, যেখানে আপনি প্রশ্ন করতে পারবেন এবং গোষ্ঠীর অন্যান্য সদস্যদের নিকট থেকে উত্তর পেতে পারবেন।
...