0 টি ভোট
ভূমিষ্কাস রোধে গৃহীত পূর্বপ্রস্তুতিমূলক কার্যকর পদক্ষেপ লিখ?

ভূমিধ্বস রোধে গৃহিত পূর্বপ্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো-

  • ১) ভূমিধ্বাসপ্রবণ এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।
  • ২) সম্ভব হলে পাহাড়ি এলাকায় মানব বসতি ও আর্থসামাজিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
  • ৩) পাহাড়ধ্বসে আগাম সংকেত প্রদান এবং আগাম কার্যক্রমে আত্মবিভাগীয় সমন্বয় জোরদার করা।
  • ৪) পাহাড়ি এলাকায় ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা তৈরি করা, যার মাধ্যমে যেখানে যে ধরনের কাঠামো প্রয়োজন হবে সেখানে সেরূপ কাঠামো নির্মান করা।
  • ৫) পাহাড়ি এলাকায় পরিকল্পিত নিবিড় বনায়ন প্রতিষ্ঠা।
  • ৬) উদ্ধার কাজে অংশগ্রহনকারীদের চিহ্নিত করে প্রযোজনীয় প্রশিক্ষণ ও দায়িত্ব প্রদান করা এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রাহে রাখা।
  • ৭) আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহকে দায়িত্ব ও আইনানুগ অধিকার দিতে হবে যাতে তারা তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
0 টি ভোট
ফার্মের প্রানির বৈশিষ্ট্য বলতে কি বুঝায়?

ফার্ম প্রাণির বৈশিষ্ট্য বলতে গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি বা অন্যান্য খামারের প্রাণীর নির্দিষ্ট জিনগত এবং শারীরিক গুণাবলীকে বোঝায়, যা তাদের উৎপাদনশীলতা, প্রজনন ক্ষমতা, অভিযোজন ক্ষমতা এবং স্বাস্থ্যের বৈশিষ্ট্যকে বুঝায়। এই বৈশিষ্ট্যগুলো বংশগত এবং পরিবেশগত উভয় কারণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং প্রাণীর কর্মক্ষমতা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উদাহরণ-

  • উৎপাদনশীল বৈশিষ্ট- 

দুধ উৎপাদন, মাংসের জন্য।

  • প্রজনন বৈশিষ্ট্য- 

বাচ্চা দেওয়ার হার, বয়ঃপ্রাপ্তির সময়।

  • অভিযোজন বৈশিষ্ট্য-

তাপ সহনশীলতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

0 টি ভোট
বাংলাদেশের ফার্মের প্রাণির গুরুত্ব কি?

অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষি স্থায়িত্ব ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদের বৈশিষ্ট্যগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১. অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা-

গবাদি পশুর বৈশিষ্ট্য যেমন বৃদ্ধির হার, দুধ উৎপাদন, মাংসের গুণমান এবং প্রজনন দক্ষতা সরাসরি পশুপালন করার মুনাফাকে প্রভাবিত করে। উন্নত বৈশিষ্ট্য উচ্চ ফলন এবং উন্নত মানের পণ্য তৈরী করে যা কৃষকদের আয় এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে।

২. খাদ্য নিরাপত্তা-

দুধ, মাংস এবং ডিমের পরিমাণ এবং গুণমানকে প্রভাবিত করে এমন বৈশিষ্ট্যগুলি একটি স্থিতিশীল এবং পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে উচ্চ ফলনশীল এবং রোগ প্রতিরোধী পশুসম্পদ উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখতে পারে।

৩. জলবায়ুর সাথে অভিযোজন-

 বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় এবং প্রায়শই চ্যালেঞ্জিং জলবায়ু পরিস্থিতিতে গবাদি পশুর স্বাস্থ্য এবং উৎপাদনশীলতা বজায় রাখার জন্য তাপ সহনশীলতা এবং রোগ প্রতিরোধের মতো স্থানীয় পরিবেশের সাথে সহনশীল বৈশিষ্ট্যগুলি পরিহার্য এবং গুরুত্বপূর্ণ।

৪. জেনেটিক উন্নতি-

 বংশগত বৈশিষ্ট্যের জন্য বাছাই (selective) প্রজনন উন্নত পশুসম্পদ প্রজাতির দিকে পরিচালিত করে যেগুলি রও বেশি উৎপাদনশীল, শক্ত এবং স্থানীয় চাষ পদ্ধতির জন্য উপযুক্ত। এটি আমদানি করা জাতের উপর ভরতা কমাতে পারে এবং স্থানীয় গবাদি পশু পালনের স্থায়িত্ব বাড়াতে পারে।

৫. টেকসই কৃষি-

 টেকসই গবাদি পশু চাষের পদ্ধতির প্রচারের জন্য দক্ষ ফিড রূপান্তর এবং পরিবেশগত প্রভাব হ্রাসে (যেমন, কম ঘেন নির্গমন) অবদান রাখে এমন বৈশিষ্ট্যগুলি গুরুত্বপূর্ণ। এটি পরিবেশ সংরক্ষণের সাথে কৃষি উৎপাদনশীলতার ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।

৬. সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মূল্য-

কিছু পশুসম্পদ বৈশিষ্ট্যের সাংস্কৃতিক তাৎপর্য রয়েছে এবং সামাজিক প্রথাকে প্রভাবিত করে। উদাহরণ স্বরূপ, ঐতিহ্যগত অনুষ্ঠানের জন্য বা সামাজিক মর্যাদার প্রতীক হিসেবে নির্দিষ্ট জাত পছন্দ করা হয় যা গবাদি পশুর প্রজনন এবং ব্যবস্থাপনাকে প্রভাবিত করে।

0 টি ভোট
উপসহকারী পদের জন্য পরীক্ষার প্রস্তুতি কিভাবে নিবো?

উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে উপসহকারী কর্মকর্তা নিয়োগের পরীক্ষার প্রস্তুতির পড়াশোনা।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি -

প্রিলির জন্য বই-

১. উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগ বই

২. সকল প্রাইমারী প্রশ্ন- বাদ যাবে- ম্যাথ, ইংরেজি লিখিত, কম্পিউটার 

৩. বিসিএস এর প্রশ্ন- বাংলা, সাহিত্য, ইংরেজি ব্যাকরণ।

প্রোফেসারের জব সলেশন।

লিখিত এর জন্য বই- পূর্বের মতোই তবে এগুলা ৪০+৪০+৪০+৮০ নম্বরের জন্য পড়তে হবে।

সাধারণ জ্ঞানের বই পড়তে হবে- বাংলা, আন্তর্জাতিক ও খেলাধুলা বিষয়ক।

ভাইভা এর জন্য -

প্রথমে স্যারকে সালাম দিয়ে উনার থেকে অনুমতি নিয়ে ভাইভা বোর্ডে প্রবেশ করবেন।এরপর শান্তশিষ্টভাবে রুমে ঢুকে স্যার বসতে বললে চেয়ারে ধীরে সুস্থে বসবেন।তখন স্যার আপনাকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন করবে।

নিজের সম্পর্কে জানতে হবে- নাম, নামের অর্থ, নাম দিয়ে বিখ্যাত বা কুখ্যাত ব্যক্তি, তাদের অবদান, বাবা-মা এর নাম, সেইম।

নিজের সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে হবে, নিজের ভালো ও খারাপ গুণ বলেন, কেন চাকরি করবেন? হালাল টাকার জন্য, 

নিজ জেলার নাম- নামকরণের ইতিহাস, উপজেলা ও নামকরণ এর ইতিহাস, ইউনিয়ন ও গ্রাম সেইম।

আপনার এলাকার বিখ্যাত কি, বিখ্যাত খাবার, বিখ্যাত ও কুখ্যাত ব্যক্তি, মুক্তিযুদ্ধের সময় এলাকা কয় নম্বর সেক্টরের ছিল, সেক্টর কমান্ডার কে ছিলেন, 

নিজের এক্সট্রা কারিকুলাম একটিভিটিস- ক্রিকেট বা ফুটবল নিয়ে বিস্তারিত, গান পারেন নাকি? একটা দেশাত্মবোধক গান (আমি বাংলায় গান গাই বা ও আমার দেশেট মাটি) , নজরুল ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গীত শিখতে হবে, এলাকার বিখ্যাত কোনো গান।যেমন- রংপুরের ভাওয়াইয়া গান।

বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে জানতে হবে বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ের উন্নয়ন নিয়ে।২৪শের আন্দোলনের সময়, কয়জন প্রধান সম্মনায়ক ও নাম।সাবজেক্টিভ পড়া, যেমন- কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তার জন্য, লাইভস্টক বা ইন্জিনিয়ারিং বিষয়ক।

সাধারণ জ্ঞান নিয়ে টুকিটাকি পড়তে হবে।যেমন- আন্তর্জাতিক বিষয়গুলা, বিভিন্ন দেশের রাজধানী, মুদ্রা, দেশের সাম্প্রতিক বিষয়াবলি, ক্রিকেট ও ফুটবল নিয়ে জানতে হবে।

আপনার টাইয়ের গিটুর নাম কি? নট (Knot)। 

কোনো কিছু খেতে দিলে, খাওয়ার সময় শব্দ যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা এবং পানি পান করার সময় ধীরে ধীরে পান করা।আর খাবারের জন্য ভাইভা বোর্ডের স্যারকে ধন্যবাদ দেওয়া।মেয়েদের ক্ষেত্রে উঁচু হিল ও ম্যাক-আপ বেশি না করা।

২৪শে গণঅভ্যুত্থানের বইয়ের নাম জানতে হবে।

0 টি ভোট
পশু বাছাই এর নির্ণায়ক বা মানদণ্ড কি কি?

১. বংশগতি-

পশুর পূর্বপুরুষের উৎপাদনশীলতা

উচ্চ উৎপাদনশীল বংশের পশু নির্বাচন।

২. শারীরিক গঠন-

দুধের জন্য- উন্নত স্তন, সঠিক গঠন, এবং শক্তিশালী শারীরিক কাঠামো।

মাংসের জন্য- পেশীবহুল শরীর, ভালো অঙ্গবিন্যাস, এবং মাংসের সঠিক বিন্যাস।

পশমের জন্য- ঘন এবং উচ্চ মানের পশম।

৩. স্বাস্থ্য (Health)-

পশু রোগমুক্ত হতে হবে।

চোখ, নাক, মুখ পরিষ্কার থাকতে হবে।

ত্বক ও পশম সুস্থ থাকতে হবে।

পশুর চলন স্বাভাবিক হতে হবে।

8. বয়স (Age)-

প্রজনন এবং উৎপাদনের জন্য সঠিক বয়সের পশু নির্বাচন করা হয়।

সাধারণত, অল্প বয়স্ক পশু নির্বাচন করা হয় যাতে তারা দীর্ঘকাল উৎপাদন দিতে পারে।

৫. প্রজনন ইতিহাস (Reproductive History)-

গাভীর ক্ষেত্রে, পূর্বের প্রসবের সংখ্যা এবং কোনো প্রজনন সমস্যা ছিল কিনা তা দেখা হয়।

ষাঁড়ের ক্ষেত্রে, শুক্রাণুর গুণমান এবং প্রজনন ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়।

৬. উৎপাদন রেকর্ড (Production Records)-

দুধ, মাংস, ডিম, বা পশমের পরিমাণ এবং গুণমান পরিমাপ করা হয়।

পূর্বের উৎপাদনের রেকর্ড বিশ্লেষণ করে পশু নির্বাচন করা হয়।

৭. অভিযোজন ক্ষমতা (Adaptability)-

পশুটি স্থানীয় পরিবেশ এবং জলবায়ুর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হতে হবে।

৮. আচরণ (Temperament)-

শান্ত এবং সহজে নিয়ন্ত্রণযোগ্য পশু নির্বাচন করা হয়।

0 টি ভোট
পশু বাছাই এর উদ্দেশ্য এবং ক্রাইটেরিয়া কি?

বাছাইয়ের উদ্দেশ্য-

  • উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি- বেশি দুধ, মাংস, ডিম, বা পশম উৎপাদনের জন্য পশু বাছাই করা হয়।
  • স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা- রোগমুক্ত এবং শক্তিশালী পশু নির্বাচন করা হয়।
  • প্রজনন ক্ষমতা- ভালো প্রজনন ক্ষমতার অধিকারী পশু বাছাই করা হয়, যা বংশবৃদ্ধিতে সহায়ক।
  • শারীরিক গঠন ও বৈশিষ্ট্য- একটি নির্দিষ্ট জাতের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পশু নির্বাচন করা হয়।
  • অর্থনৈতিক উন্নতি-
  • খামার ব্য পশুপালনের মাধ্যমে লাভজনকতা বৃদ্ধি করা।
0 টি ভোট
বাছাই কাকে বলে?

পশুকে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন করা করাকে বাছাই বলে।

0 টি ভোট
দুধের ভেজাল সনাক্ত করার পদ্ধতি লিখ?

জনসাধারণের দ্বারা খাওয়া দুগ্ধজাত পণ্যের নিরাপত্তা এবং গুণমান নিশ্চিত করার জন্য দুধে ভেজাল সনাক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুধে বিভিন্ন ধরনের ভেজাল সনাক্ত করতে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এখানে কিছু সাধারণ সনাক্তকরণ পদ্ধতি রয়েছে-

দুধের ভেজাল চেনার উপায় -

  • বিকারক পরীক্ষা-

দুধে হাইড্রোজেন পারক্সাইড (H2O2) যোগ করলে ইউরিয়া বা অন্যান্য নাইট্রোজেনাস যৌগের উপস্থিতি নির্দেশ করতে পারে। একইভাবে, মিথিলিন ব্লু যোগ করলে ফরমালিনের উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়, যা দুধের শেলফ লাইফ বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত একটি সাধারণ সংরক্ষণকারী।

  • টেস্ট কিট-

বাণিজ্যিকভাবে উপলব্ধ টেস্ট কিটগুলিতে রাসায়নিক বিকারক বা টেস্ট স্ট্রিপ থাকে যা দুধে নির্দিষ্ট ভেজাল সনাক্ত করতে পারে। এই কিটগুলি ব্যবহার করা সহজ এবং দ্রুত ফলাফল প্রদান করে।

  • সংবেদনশীল বিশ্লেষণ-

প্রশিক্ষিত প্যানেলিস্ট বা ভোক্তাদের দ্বারা সংবেদনশীল মূল্যায়ন দুধের স্বাদ, গন্ধ, রঙ বা টেক্সচারের পরিবর্তন সনাক্ত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ভেজাল বা নষ্ট হওয়ার ইঙ্গিত দিতে পারে।

  • অর্গণোলেপটিক পরীক্ষা-

চোখে দেখে দুধের পরীক্ষা করা। এর মাধ্যমে দুধের রং, গন্ধ কিংবা দুধে কোন অবাঞ্ছিত বস্তু আছে কিনা তা নির্ণয় করা যায়।

  • লেক্টোমিটার রিডিং-

 লেক্টোমিটার রিডিং এর মাধ্যমে দুধে যদি কোন ভেজাল দ্রব্য মেশানো থাকে তাহলে তা নির্নয় করা যায়। এছাড়া দুধ চর্বি মুক্ত করা কি না তাও এ টেস্টের মাধ্যমে বোঝা যায়।

  • রিজাজুরিন টেস্ট-

দুধে কি পরিমাণ ব্যাক্টেরিয়া আছে তা এ পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়।

  • বাটার ফ্যাট টেস্ট-

 বাটার ফ্যাট টেস্ট দ্বারা দুধের চর্বি নির্ণয় করা হয়। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর উপর ভিত্তি করে দুধের মূল্য পরিশোধ করা হয়। যে দুধের ফ্যাট যত বেশি তার মূল্য তত বেশি।

0 টি ভোট
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি? চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি লিখ?

ভূমিকা-

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় দেওয়ানি অধিকার লাভ করে ১৭৬৫ সালে। কতিপয় কর্মচারীর দুর্নীতির জন্য বাংলার ভাগ্যাকাশে নেমে আসে অন্ধকার। কারণ দেওয়ানি ক্ষমতা লাভের পর কোম্পানির কর্মচারীদের অত্যাচার, শোষণ, নির্যাতন বেড়েই চলে। তাই সংঘটিত হয় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। এসব কারণে ব্রিটিশ সরকার কোম্পানিকে দায়ী করে এবং ভারতবর্ষে নতুন একজন গভর্নর জেনারেল হিসেবে ওয়ারেন হেস্টিংসকে পাঠায়। হেস্টিংসের আমলে প্রথম রেগুলেটিং এ্যাক্ট পাস হয় যা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। এরপর ভারতে গভর্নর জেনারেল হয়ে আসেন লর্ড কর্নওয়ালিস। এ কর্নওয়ালিসের শাসনামলেই পূর্বের অনেক আলোচনা-সমালোচনার পর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ঘোষণা করা হয়।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি-

১৯৯৩ সালে চিরস্থায়ী নিম্নে আলোচনা করা হলে বন্দোবস্ত প্রবর্তিত হলেও এর সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত ছিল।

১. দাও-এর মতবাদ-

 কোম্পানি যখন ১৭৬৫ সালে দেওয়ানি লাভ করে তারপর বাংলার চরম অবস্থা উপলব্ধি করে সমস্যা সমাধানের জন্য শাসন সম্পর্কে দুজন পরামর্শদাতার নাম ইতিহাসে খ্যাত। এরা দুজন হলেন আলেকজান্ডার দাও ও হেনরি পেটুলো। আলেকজান্ডার দাও কোম্পানি শাসনকার্য পরিচালনার প্রতি উপহাস করে বলেন যে, নবাবি শাসননীতি ছিল "মধুর চাকের মধু খাওয়া, চাক ধ্বংস করা নয়, কিন্তু ইংরেজরা এর মধু খেয়ে মধুর চাক পর্যন্ত ধ্বংস করে দেয়।" তাই কোম্পানির অত্যাচারী শাসন থেকে বাংলার অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার পিজন্য তিনি ভূমি সংস্কারের পরামর্শ দেন। এতে তিনি বলেন-

  • (ক) বর্তমান বার্ষিক রাজস্ব হার বজায় রেখে সরকার কর্তৃক নগদ সেলামির পরিবর্তে ভূমি চিরস্থায়ীভাবে ব্যক্তিগত মালিকানায় ছেড়ে দেয়া।
  • (খ) একসাথে সমস্ত জমি বিক্রয়জনিত বাজার মূল্য হ্রাস এড়ানোর জন্য সরকার কর্তৃক সমগ্র ভূমির এক-চতুর্থাংশ বিক্রি করে চার বছরে বিক্রয়কার্য সম্পন্ন করা।
  • (গ) বিক্রয়লব্ধ টাকা সরকারি খাতে বিনিয়োগ করে সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধি করা।
  • (ঘ) জমিতে একটানা মালিকানা রোধ করার জন্য ভূমি নিয়ন্ত্রণের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেয়া।দাও এ মত দ্বারা বাংলার ঐতিহ্য ফিরে পাওয়া সম্ভব বলে মনে করতেন।

২. বার্ষিক জমিদারি বন্দোবস্তের কুফল-

ওয়ারেন হেস্টিংসের "আজীবন বন্দোবস্ত" ও ফিলিপ ফ্রান্সিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দুটো বোর্ড অব ডাইরেক্টরে বিবেচনার জন্য প্রেরণ করা হয়। কোর্ট উভয় পরিকল্পনাই আপাতত বর্জন করে এবং আদেশ দেয় যে, পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত সরকারের উচিত বার্ষিক মেয়াদে জমিদারদের সাথে ভূমি বন্দোবস্ত করা। ইজারা প্রথা পরিত্যাগ করে শুধু জমিদারদের সাথে ভূমি বন্দোবস্ত করার জন্য কোর্টের সিদ্ধান্ত ছিল ভূমিতে জমিদারিত্বের স্বীকৃতি। যদিও কোর্ট ফ্রান্সিসের পরিকল্পনাকে একটি অতি প্রশংসনীয় ব্যবস্থা বলে গ্রহণ করে তথাপিও তা কার্যকরী করা সম্ভব হয়নি। কারণ এর পশ্চাতে জানা দরকার- ১. স্থায়ী রাজস্ব ব্যবস্থা কি হওয়া উচিত। ২. গভর্নর জেনারেলের পরিকল্পনাকে পাস কাটিয়ে একজন কাউন্সিলরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের রাজনৈতিক অসুবিধা। তাই এটা কার্যকরী করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে না হলেও অনেকটা অবদান ছিল।

৩. চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জন্য ডাইরেক্টর সভার নির্দেশ-

পীটস ইন্ডিয়া এ্যাক্ট পাস হওয়ার পর বাংলার রাজস্ব সম্পর্কে কোম্পানি নীতি পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। এক্ষেত্রে দেখা যায়, বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত ইন্ডিয়া অফিসে বাংলার ভূমি ব্যবস্থা কি হওয়া উচিত এ নিয়ে এককভাবে চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই। হয়তো যোগ্যতাও নেই। এ ব্যাপারে যারা গভীর চিন্তা করেছিলেন তারা হলেন ফিলিপ ফ্রান্সিস, জন শো'র ও চার্লস স্টুয়ার্ট। এরা সবাই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রবক্তা ছিলেন। এমতাবস্থায় কোর্ট অব ডাইরেক্টরস তাদের সমস্ত পরিকল্পনা, স্মারকপত্র, চিঠিপত্রসমূহ সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, বাংলার জন্য একমাত্র চিরস্থায়ী বন্দোবস্তই কাম্য। ১৭৮৬ সালের ১১ এপ্রিল লেখা পত্রে কলকাতা কর্তৃপক্ষকে এ যুগান্ত কারী সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

৪. জন শো'র ও কর্নওয়ালিস বিতর্ক-

১৭৮৬ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কোর্ট অব ডাইরেক্টরস লর্ড কর্নওয়ালিসকে গভর্নর জেনারেল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কোর্ট চিরস্থায়ী বন্দোবস্তকে কার্যকরী করার জন্য কর্নওয়ালিসকে উপযুক্ত বলে মনে করেন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় কর্নওয়ালিসের/ প্রধান রাজস্ব উপদেষ্টা ও বোর্ড অব রেভিনিউর প্রেসিডেন্ট জন শোর। শোর যুক্তি দেখান যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কার্যকরী করার পূর্বে জানা দরকার।

  • (ক) জমিদার, তালুকদার ও রায়তের বর্তমান আর্থিক অবস্থা।
  • (খ) মুঘল শক্তির অবক্ষয়ের আগে জমিদার ও রায়তের অধিকার।
  • (গ) মুঘল শক্তির পতনের পর্বে রায়তের খাজনা সংক্রান্ত আইন ও রেওয়াজ।
  • (ঘ) দেওয়ানি লাভের পর জমিদার কর্তৃক আরোপিত নতুন আবওয়াব, মামথ ইত্যাদি।
  • (ঙ) সাধারণ রায়তের স্বার্থরক্ষার উপায়।
  • (চ) বর্তমান রাজস্ব ধার্য ব্যবস্থার ত্রুটিসমূহ ও তা দূর করার উপায়।
  • (ছ) ১৭৭২ সাল থেকে প্রত্যেক জমিদারি বিস্তারিত জমা, উশুল ও বাকি হিসেবে সংগ্রহ।

এরপর কর্নওয়ালিস আশা ব্যক্ত করেন যে, এখন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করা হবে। তবে একটু দেরি হয়।

৫. দশসালা বন্দোবস্ত কোর্ট অব ডাইরেক্টরস-

এর নির্দেশনামায় (১২ এপ্রিল, ১৭৮৫) বলা হয়েছিল যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের উদ্দেশ্যে একটি ক্ষণস্থায়ী বন্দোবস্ত করা হয়। কোর্টের অনুমোদন লাভের পর সেই স্বল্পমেয়াদি বন্দোবস্তই চিরস্থায়ী বলে ঘোষণা করা হবে। সে নির্দেশ মোতাবেক গভর্নর জেনারেল ইন কাউন্সিল ১৭৮৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বিহার প্রদেশের জন্য দশসালা বন্দোবস্তের প্রস্তাব করেন। এতে শোর ও কর্নওয়ালিসের মধ্যে বিতর্ক দেখা দেয়। এতে প্রস্তাব ছিল যে, "জমিদারদের সাথে বন্দোবস্ত করা হোক এবং নোটিশ জারি করা হোক যে, কোর্ট অব ডাইরেক্টরস কর্তৃক অনুমোদিত হলে তা চিরস্থায়ী বলে গণ্য হবে এবং দশ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর বন্দোবস্তে কোনো রদবদল হবে না।" এক পর্যায়ে বিতর্ক দেখা দেয় ঘোষণা নিয়ে। শেষে ১৭৮৯ সালে বিহার প্রদেশে দশসালা বন্দোবস্ত প্রবর্তন করা হয়। প্রস্তাবে বলা হয় যে, বাংলা সন ১১৯৭ সালের ১ বৈশাখ থেকে দশ বছরের জন্য জমিদারের সাথে ভূমি বন্দোবস্ত করা হোক। বন্দোবস্তের নাম দেয়া হয় দশসালা।

৬. কৃষি বিপ্লব ও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত-

কর্নওয়ালিস কৃষিক্ষেত্রে কিছুটা উন্নতি সাধন করে। জন শো'র ও কর্নওয়ালিসের বিতর্কের সমস্ত কাগজপত্র জমা দেন। সাথে সাথে দশসালা বন্দোবস্তের দলিলপত্রও জমা দেন। তারপর অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৭৯২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কোর্ট চূড়ান্ত নির্দেশ কর্নওয়ালিসকে জানায়। ১৭৯৩ সালে ২২ মার্চ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ঘোষণা করেন লর্ড কর্নওয়ালিস।

উপসংহার-

 পরিশেষে বলা যায় যে, লর্ড কর্নওয়ালিস প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ছিল ব্রিটিশ ভারতের কোম্পানি শাসনের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর ফলে সুদীর্ঘকাল ধরে ভারতে কোম্পানির রাজস্ব সম্পর্কে জামিদার ও সরকার জমিদার ও রায়ত ইত্যাদি সম্পর্কে যে জটিলতা ছিল তার অবসান হয়। এছাড়া এ বন্দোবস্তের মাধ্যমে প্রশাসনিক কাঠামোর পুনর্বিন্যাস করা হয়। এছাড়া এ বন্দোবস্তের প্রেক্ষাপট তথা পটভূমি ছিল একটি শোষণ ক্ষমতা দখল করার প্রয়াস যা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছিল।

0 টি ভোট
সমাজ সংস্কারে হাজী শরীয়তুল্লাহর অবদান লিখ?

ভূমিকা-

ব্রিটিশশাসিত ভারতে বিশিষ্ট হিন্দু-মুসলিম নেতাদের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি সংস্কারমূলক আন্দোলন গড়ে উঠে। এসব আন্দোলনের মধ্যে সংস্কারমূলক আন্দোলন হিসেবে ফরায়েজি আন্দোলন অন্যতম। এ আন্দোলনের মূল দার্শনিক ভিত্তি হলো একনিষ্ঠভাবে কুরআন শরিফের নির্দেশ পালন করা।

সমাজসংস্কারে ফরায়েজি আন্দোলনের অবদান নিম্নে সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রে ফরায়েজি আন্দোলনের অবদান উল্লেখ করা হলো-

১. কুসংস্কার দূরীকরণ-

সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রে হাজী শরীয়তউল্লাহর ফরায়েজি আন্দোলনের অবদান অপরিসীম। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ইসলাম ধর্মের আদর্শের মানুষকে অনুপ্রাণিত করা এবং কুসংস্কার দূর করা।

২. একেশ্বরবাদ ও সাম্যবাদের আদর্শ প্রতিষ্ঠা-

মুসলমানদের ব্যাপক সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে ফরায়েজি আন্দোলনের মাধ্যমে ইসলামের একেশ্বরবাদ বানানো ও সাম্যবাদের মহান আদর্শ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। সমাধি সৌধ নির্মাণ, মহররমের তাজিয়া বানানো, ওরশ, শিশুর জন্মদিনের উৎসব, বিয়েতে অহেতুক বেশি অর্থের অপচয়, হিন্দুদের পূজাপার্বণে মুসলমান সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ ইত্যাদি কার্যাবলি ইসলামবিরোধী বলে ঘোষণা করেন। মুসলমান সমাজের তিনি আশরাফ আতরাফ প্রথার বিলোপসাধন করেন। ইসলামের মহান আদর্শে বলীয়ান হয়ে অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুসলমান জাতিকে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান করেন।

৩. ধর্মীয় সংস্কার-

ফরায়েজি আন্দোলনের মাধ্যমে মুসলি সমাজে অনুপ্রবেশকারী বিভিন্ন কুসংস্কার, শিরক ও বিদআর মূলোৎপাটন করা হয়। মুসলিম সমাজের প্রচলিত বিভিন্ন কুসংস্কার। রয়েছে। যেমন- কবরপূজা, পিরপূজা, পির মুরিদ ও আশরাফ আতরাফ সম্পর্ক, পিরের দোহাই দেয়া প্রভৃতি। এ আন্দোলনের মূল লক্ষ্যই ছিল মুসলমান সমাজকে কুসংস্কারমুক্ত করে একেশ্বরবাসে। সকলকে উদ্বুদ্ধ করা, যাতে তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনে দেবদেবী, কবরপূজা, সেজদা করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকে।

উপসংহার-

ফরায়েজি আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি ইংরেজ, নীলকর, জমিদার গোষ্ঠীর অত্যাচার প্রতিরোধ ও বৈষম্য দূর করার প্রচেষ্টা চালান। ইংরেজদের শাসনের অবসান ও মুসলমানদের রাজনৈতিক কর্তত্ব প্রতিষ্ঠা করাই ছিল এ আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য। ফরায়েজি আন্দোলন বাঙালির ইতিহাস কেবল ধর্মসংস্কার আন্দোলন কিংবা রাজনৈতির সংগ্রামই নয়, এটি সরাসরি সমগ্র জনগণকে আত্মসচেতনতাবোধ জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে পরিচালিত করা হয়েছিল।

0 টি ভোট
হাজী শরীয়ত উল্লাহর ফরায়েজি আন্দোলনের প্রভাব বর্ণনা কর?

ভূমিকা- 

১৭৫৭ সাল পর্যন্ত মুসলমানগণই ভারতবর্ষ শাসন করে আসছিল। এদিক দিয়ে মুসলমানগণ ছিল এক ঐতিহ্যের দাবিদার। কিন্তু ১৭৫৭ সালে পলাশির প্রান্তরে পরাজয়ের ফলে ইংরেজরা এদেশ দখল করে নেয়। তাই ইংরেজরা মুসলমান সংস্কৃতি বিরোধী আগ্রাসন চালায়। আর এ আগ্রাসন ও বিপর্যয়ের হাত হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য হাজী শরীয়ত উল্লাহ দৃঢ়সংকল্প নিয়ে ফরায়েজি আন্দোলন গড়ে তোলেন। মূলত ধর্মীয় উদ্দেশ্যে এ আন্দোলন পরিচালিত হলেও পরে তা রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ নেয়। আর তার এ আন্দোলনের ফলেই বাংলার মুসলমান শোষণ হতে মুক্তি পায়।

সমকালীন মুসলিম সমাজের ওপর ফরায়েজি আন্দোলনের প্রভাব-

নিম্নে সমকালীন মুসলিম সমাজের ওপর ফরায়েজি আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা করা হলো-

১. হতাশাগ্রস্ত মুসলমানদের বিশ্বাস ও চেতনার জাগরণ-

ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে ফরায়েজি আন্দোলন মুসলমানদের জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে যা তাদেরকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করেছে। এ আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হতাশাগ্রস্ত মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় অনভূতি ও বিশ্বাস জাগ্রত করে তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। ফরায়েজি আন্দোলনের প্রভাব সম্পর্কে মন্তব্য করতে ইংরেজ লেখক ওয়াইজ বলেন, "ফরায়েজি আন্দোলন বাংলার উদাসীন মুসলমানদের উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করে তাদের অন্তর্নিহিত বিশ্বাস এবং চেতনাকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়।" তৎকালীন ব্রিটিশ শাসিত ভারতীয় উপমহাদেশে নীলকর, জমিদার, আমলা ও শাসকগণের অত্যাচার থেকে মুসলমানদেরকে রক্ষা করা, শ্রেণি বৈষম্য বিলোপ, কবর ও পির পূজা বন্ধকরণ এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের মুসলমানদেরকে আত্মসচেতন এবং উদ্বুদ্ধকরণের ক্ষেত্রে ফরায়েজি আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম।

২. আদর্শ সমাজ গঠন-

মানুষ সামাজিক জীব।সমাজে মানুষ তার অধিকার সুযোগ ও স্বাধীনতা' ভোগ করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ব্রিটিশ শাসন আমলে বাঙালি মুসলমানগণ সে অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা থেকে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হয়। এ প্রেক্ষাপটে হাজী শরীয়ত উল্লাহ মুসলমানদের আর্থসামাজিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ফরায়েজি আন্দোলনের ডাক দেন এবং তার এ আন্দোলন মুসলমানদের হৃত সামাজিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বিস্তার করতে থাকে। তখন এর বিরুদ্ধে হাজী শরীয়ত উল্লাহ কঠিন অবস্থান নেন এবং মুসলমানদের এ আন্দোলনের পক্ষে আনয়ন করে সুষ্ঠু ন্যায়সঙ্গত সামাজিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হন।

৩. ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সূচনা-

 হাজী শরীয়ত উল্লাহর মৃত্যুর পর তাঁর সুযোগ্য পুত্র মোহাম্মদ মহসীন ওরফে দুদু মিয়া এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ধর্মীয় অনভূতিকে জাগ্রত করা এবং মুসলমানদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এ আন্দোলন রাজনৈতিক রূপ লাভ করে। দুদু মিয়ার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আন্দোলনটি শক্তিশালী ও জনপ্রিয় হয়ে উঠে। তিনি পূর্ববঙ্গকে কয়েকটি অঞ্চলে বিভক্ত করে প্রত্যেক অঞ্চলের জন্য একজন খলিফা বা প্রতিনিধি নিয়োগ করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ফরিদপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও পাবনা জেলা ছাড়াও দূরবর্তী আসাম প্রদেশ বিশেষ করে সিলেট জেলা ও পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত আন্দোলনের প্রসার ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি বিভিন্ন অত্যাচার হতে মুসলমান কৃষক-প্রজাদের রক্ষা করাই ছিল আন্দোলনের প্রভাব।

৪. কর ব্যবস্থার বিলোপ সাধনের চেষ্টা-

দুদু মিয়া জমিদার কর্তৃক প্রজাদের উপর কর ধার্যের ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহই ভূমির মালিক। কোনো মানুষেরই ইহা উত্তরাধিকার সূত্রে দখল করে এর উপর কর ধার্য করার অধিকার নেই। এর ফলে জমিদারগণ তার ঘোর বিরোধী হয়ে উঠে এবং এর বিরুদ্ধে কতকগুলো মিথ্যা মামলা তারা দায়ের করে। তা সত্ত্বেও তিনি আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারেন। ফলশ্রুতিতে ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে দুদু মিয়াকে আলীপুর কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। এর ফলে আন্দোলন অনেকটা দুর্বল হয়ে যায়।

৫. সাম্প্রদায়িক বিরোধ সৃষ্টি-

 ফরায়েজি আন্দোলন ধর্ম সংস্কারমূলক হলেও এটি অন্য ধর্মের বিরোধিতা করেনি। এ আন্দোলন পরবর্তীতে অনেকটা সাম্প্রদায়িকতার দিকে ঠেলে দেয়। কারণ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রায়তদের অধিকাংশ ছিল মুসলমান এবং জমিদারগণ ছিল হিন্দু। ফলে হিন্দু জমিদার ও মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিরোধের রূপ নেয়। হিন্দু জমিদারগণকে ব্রিটিশ সরকার সমর্থন করলেও শ্রেণি দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। এর ফলশ্রুতিতে শ্রেণি স্বার্থের দ্বন্দ্ব এক সময় সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের চরিত্র লাভ করে।

৬. কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষকে প্রতিবাদী করে তোলে-

 হাজী শরীয়ত উল্লাহর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, অসীম সাহস এবং কৃষক, শ্রমিক, মজুরদের সমবেত প্রচেষ্টায় স্বল্প সময়ের মধ্যে ফরায়েজি আন্দোলন সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনের রূপ পরিগ্রহ করে সমগ্র বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে। এ আন্দোলনের ফলে বাংলার কৃষক, শ্রমিক, তাঁতী ও কারিগরদের জীবনে জাগরণের নতুন স্পব্দন সৃষ্টি হয়। মুসলমানরা জমিদার, আমলা ও নীলকরদের অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শেখে, যা তাদেরকে অধঃপতন থেকে উদ্ধার পেতে আত্মপ্রত্যয়ী হতে সাহায্য করে। শোষিত জনগণকে অধিকার সচেতন করে তোলাই ফরায়েজি আন্দোলনের পরম কৃতিত্ব। জেমস টেলরের বর্ণনা অনুযায়ী, ১৮৪০ সাল নাগাদ ঢাকা শহরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ লোক হাজী শরীয়ত উল্লাহর মতবাদ স্বেচ্ছায় গ্রহণ করে।

৭. সচেতনতা সৃষ্টি ও আত্মপ্রত্যয়ী করে তোলা-

ফরায়েজি আন্দোলনের মাধ্যমেই মুসলমানদেরকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে সচেতন করে তোলা হয়। তাই সার্বিক দিক থেকে বলা যায় যে, তৎকালীন সময়ে ফরায়েজি আন্দোলনের ব্যাপক ও বহুমুখী গুরুত্ব ছিল। ঐতিহাসিক ওয়াইজ-এর মতে, "ফরায়েজি আন্দোলন বাংলার মানুষদের উৎসাহিত ও আত্মপ্রত্যয়ী করার মাধ্যমে তাদের অন্তর্নিহিত বিশ্বাস ও চেতনাকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়।"

উপসংহার-

পরিশেষে বলা যায় যে, হাজী শরীয়ত উল্লাহর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, অসীম সাহস এবং কৃষক শ্রমিক মজুরদের প্রচেষ্টায় ফরায়েজি আন্দোলন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আন্দোলনের রূপ পরিগ্রহ করে সমগ্র বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে। জমিদার, নীলকর, মহাজন ও আমলাদের অমানুষিক নির্যাতন ও অত্যাচার এবং ধর্মীয় কুসংস্কার ও গোঁড়ামি থেকে মুসলমানদের রক্ষার জন্য এ আন্দোলনের কার্যক্রম পরিচালিত হয় এবং সমকালীন মুসলিম সমাজ সংস্কারে এর প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ ছিল।

0 টি ভোট
তড়িৎ দ্বিমেরু কাকে বলে?
যেখানে দুটি সমপরিমাণ কিন্তু বিপরীতধর্মের বিন্দুদ্বয় চার্জবিশিষ্ট একে অপরের খুব কাছাকাছি থাকলে তাদেরকে একত্রে তড়িৎ দ্বিমেরু বলা হয়।
0 টি ভোট
আলীগড় আন্দোলনের অবদান সম্পর্কে যা জান বিস্তারিত আলোচনা করো?

ভূমিকা-

 ব্রিটিশ শাসিত ভারতীয় উপমহাদেশে যেসব মনীষী পশ্চাৎপদ মুসলমানদের অজ্ঞতা, অশিক্ষা, সামাজিক শোষণ, রাজনৈতিক বঞ্চনা এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের মধ্যে স্যার সৈয়দ আহমদ অন্যতম। তিনি তৎকালীন ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের নবজাগৃতির অন্যতম পথনির্দেশক ছিলেন। তাঁর পরিচালিত উত্তর ভারতের আলীগড়ভিত্তিক সংস্কার আন্দোলন ইতিহাসে আলীগড় আন্দোলন নামে পরিচিত। স্যার সৈয়দ আহমদ ভারতীয়। উপমহাদেশে মুসলমানদের সামাজিক শোষণ, রাজনৈতিক বঞ্চনা এবং অর্থনৈতিক দুর্দশা মোকাবিলা করে অধঃপতিত মুসলমানদের মর্যাদা সহকারে সমাজে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে আলীগড় আন্দোলন গড়ে তোলেন। এটি ছিল প্রত্যক্ষ সংগ্রামের পরিবর্তে ব্রিটিশ শাসনের সঙ্গে সহযোগিতাধর্মী সম্পর্ক স্থাপনের সংস্কার আন্দোলন। মুসলিম স্বার্থ সংরক্ষণে আলীগড় আন্দোলন গড়ে তোলা হয়েছিল।

আলীগড় আন্দোলনের অবদান স্যার সৈয়দ আহমদ খান পরিচালিত আলীগড় আন্দোলন উপমহাদেশের মুসলমানদের জ্ঞানবিজ্ঞান ও যোগ্যতা অর্জনে উৎসাহিত করে। যা পরবর্তীতে মুসলমানদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সুদূরপ্রসারী অবদান রাখতে সক্ষম হয়। নিম্নে মুসলিম স্বার্থ সংরক্ষণে আলীগড় আন্দোলনের অবদান বর্ণনা করা হলো-

মোহামেডান এ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।এ কলেজটি পরবর্তীতে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।

১. শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান-

 শিক্ষাক্ষেত্রে মুসলমানদের উন্নতিস উপমহাদেশে মুসলমানদের জ্ঞানবিজ্ঞানের উৎকর্ষতা সাধনের জন এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কার্যকর অবদান রেখে চলেছে। যার সুফল আজকের মুসলমানরা প্রত্যক্ষভাবে ভোগ করছে। এ প্রসঙ্গে বল হয়েছে, The college was much more than a seat of learning, it soon became the centre of the politic

অর্থাৎ, এ কলেজটি জ্ঞানের অনেকগুলো শাখায় বিভক্ত ছিল। এটি ক্রমান্বয়ে ভারতীয় মুসলমানদের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল।

২. আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞানে মুসলমানদের উদ্বুদ্ধকরণ-

ইংরেজ সরকার মুসলমানদের কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে সম্মত ছিল না বিশেষ করে তারা হিন্দুদের তুলনায় ইংরেজি ও বিজ্ঞান চর্চায় পিছিয়ে ছিল। আলীগড় আন্দোলনের মাধ্যমে স্যার সৈয়দ আহমদ মুসলমানদেরকে ইংরেজ সরকারের সহযোগিত নিয়ে এসব সুযোগ-সুবিধা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেন। এজন্য তিমি তাহজিব-উল-আখলাক নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। যাতে মুসলমানরা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুযোগ পেতে পারে এবং পাশ্চাত্যের সাহিত্য ও বিজ্ঞান রপ্ত করতে পারে। এ আন্দোলনের পটভূমিতে মুসলমানদের জ্ঞানবিজ্ঞানে পশ্চাৎপদতার কারণ স্যার সৈয়দ আহমদ খান চিহ্নিত করেন-

  • (ক) সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষার অভাব।
  • (খ) নতুন শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষার অভাব
  • (গ) অপরাধ বা অনৈতিকতা এবং মুসলিম ধ্যান-ধারণা ও আচরণের অভাব।
  • (ঘ) মুসলমানদের মধ্যে কুসংস্কার।
  • (ঙ) সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষাগত ত্রুটি।
  • (চ) মুসলমানদের ব্যবহার, অভ্যাস, প্রথাগত ত্রুটি।

এসব ত্রুটি অনুসন্ধান করে স্যার সৈয়দ আহমদ স্পষ্টভাবে বলেন যে, প্রচলিত সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা কোনোভাবে মুসলমানদের চাহিদা পূরণ করতে পারে না। এ আন্দোলনের মাধ্যমে ইংরেজ সরকারের প্রতি আনুগত্যশীল হয়ে মুসলমানদের। উন্নতির পথ প্রশস্ত করার লক্ষ্যে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে ইংরেজি বইগুলো উর্দু ভাষায় রূপান্তর করে মুসলমানদের জ্ঞানবিজ্ঞানে সমৃদ্ধশালী করতে সাহায্য করেন।ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সাহায্য করে এসেছে।

৩. মুসলমানদের একতাবদ্ধকরণ-

ভারতীয় মুসলমানদের ইসলামি যাতে মুসলমানরা তাদের সমস্যাগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে সমাধা করতে পারে। এক্ষেত্রে স্যার সৈয়দ আহমেদের দু'ধরনের আহ্বান ছিল-

প্রথমত, মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি।লেখাপড়া করুক এবং বসবাস করুক তাদের মধ্যে পরস্পর দ্বিতীয়ত, মুসলিম পরিবারের ছেলেমেয়েরা যে যেখানে সহনশীলতার অনুভূতির জন্ম দেয়া।

৪. পাশ্চাত্য জ্ঞানবিজ্ঞানের সাথে পরিচিতিকরণ-

আলীগড় আন্দোলন ভারতবর্ষের মুসলিম জাতি সত্তার বিকাশে নিয়োজিত ছিল। বিশেষ করে অনুবাদ সমিতি যা পরবর্তীতে আলীগড় বিজ্ঞান সমিতি নামকরণ হয়। স্যার সৈয়দ আহমদ সমিতিতে তাঁর বন্ধু ও ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের কাজ করার জন্য আহ্বান জানান এবং পশ্চিমা দেশের বই পুস্তক উর্দু ভাষায় অনুবাদ করে ভারতের মুসলমানদের কলা, বিজ্ঞান আইন ও সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি তার বিজ্ঞান সমিতিতে বলেন, আমি লক্ষ্য করি যে, আমাদের অতীত ইতিহাস অজ্ঞতার এবং এ জাতির এমন কোনো নির্দেশনা নেই যা তাদেরকে ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গঠনে সাহায্য করতে পারে। এ সমিতিতে কর্নেল গ্রাহাম উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতো এবং ইংরেজি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতো এবং তার সহযোগিতায় স্যার সৈয়দ আহমদ একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। যা পরবর্তীতে ভিক্টোরিয়া কলেজে রূপান্তর হয়।

ভারতীয় মুসলমানদের জ্ঞানবিজ্ঞান বিকাশের স্বার্থে ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় তিনি সাপ্তাহিক আলীগড় গেজেট নামে পত্রিকা প্রকাশ করেন। এটি সাপ্তাহিক হলেও সপ্তাহে দু'সংখ্যা প্রকাশিত হতো। মুসলমানদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন করার ক্ষেত্রে এ পত্রিকার অবদান ছিল এবং যে সময় স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সাংবিধানিক সংকট উত্তরণের জন্য এ ধরনের উদ্যোগ অপরিহার্য ছিল।

৫. মুসলিম জাতিসত্তার বিকাশ-

আলীগড় আন্দোলন ভারত উপমহাদেশের মুসলিম পুনর্জাগরণের সূত্রপাত ঘটায়। মুসলমানরা যেভাবে জ্ঞানবিজ্ঞানে পশ্চাৎপদ ছিল তা থেকে মুক্ত জ্ঞান চর্চায় এবং তৎকালীন পাশ্চাত্য জগতের জ্ঞানবিজ্ঞানের সাথে পরিচিতি করণে আলীগড় আন্দোলন যে অবদান রাখে তার সূত্র ধরে দুইটি ক্ষেত্রে মুসলমানদের অগ্রগতি সাধিত হয়।

প্রথমত, শাসক এবং শাসিতদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি দূর করে একটি বিশ্বস্ত পরিবেশ তৈরি করা "To remove distrust and achieve understanding between the rulers and the ruled (Muslims).

দ্বিতীয়ত, মুসলমানদের অধঃপতন এবং স্থবিরতা থেকে জাগ্রত করা "To arouse the muslims from downfall and stagnation."

মুসলমানরা এ আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষা সংস্কৃতির বিকাশ, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অধিকার আদায়ে সোচ্চার এবং ইংরেজদের সাথে ভুল বুঝাবুঝি দূর করতে অনেকাংশে সফল হয়।

উপসংহার-

পরিশেষে বলা যায় যে, এ আন্দোলন মুসলমানদের উন্নয়ন ও সংগঠিত হবার এক আন্দোলন। যদিও এ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব স্যার সৈয়দ আহমদকে আধুনিক শিক্ষা প্রবর্তনের কারণে গোঁড়া মুসলিমরা তাকে কাফির হিসেবে অভিহিত করে কিন্তু শত বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও স্যার সৈয়দ আহমদ ও তাঁর সহযোগীদের উদ্যোগ ব্যাহত হয়নি। এ আন্দোলন মুসলিম সমাজের কুসংস্কারের পরিবর্তে মুক্ত চিন্তার অনুপ্রবেশ ঘটায়। এজন্য এ আন্দোলন প্রসঙ্গে বলা হয়, "Aligarh Movement opened the door of modern education for Indian Muslims and brought about a new awakening among them." অর্থাৎ আলীগড় আন্দোলন ভারতীয় মুসলমানদের জন্য আধুনিক শিক্ষার দ্বার উন্মোচন করে এবং তাদেরকে নতুনভাবে জাগ্রত করতে সাহায্য করে।

0 টি ভোট
হাজী শরীয়ত উল্লাহর ফরায়েজি আন্দোলনের কার্যক্রম ও প্রভাব আলোচনা করো?

ভূমিকা-

বর্তমান সমাজকল্যাণের অনেক কিছুই অতীতের সমাজ সংস্কারকদের সাধনা ও প্রচেষ্টার ফল। সমাজকল্যাণের সাথে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয় হিসেবে সমাজ সংস্কার চিহ্নিত। ফরায়েজি আন্দোলন সমাজ সংস্কারে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য, রাজনৈতিক শাসন-বঞ্চনার বিরুদ্ধে হাজী শরীয়ত উল্লাহর নেতৃত্বে ফরায়েজি আন্দোলন পরিচালিত হয়। ফরায়েজি আন্দোলনের মূল দর্শন ছিল মূলত মুসলমানদেরকে তাদের ধর্মীয় মূলনীতি অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। হাজী শরীয়ত উল্লাহর মৃত্যুর পর দুদু মিয়া এ আন্দোলন পরিচালিত করেন।

ফরায়েজি আন্দোলনের কার্যক্রম নিয়ে ফরায়েজি আন্দোলনের কার্যক্রমসমূহ বর্ণনা করা হলো-

১. ইসলামি আদর্শ প্রতিষ্ঠা-

ইসলাম মুসলমানদের পবিত্র ধর্ম।আর এ ধর্মের অনুসরণের মাধ্যমেই মানবতার কল্যাণ ও মুক্তি নিহিত। তাই মুসলমানদেরকে হাজী শরীয়ত উল্লাহ কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে জীবন পরিচালনার পথে উদ্বুদ্ধ করতো। এ আন্দোলনের একমাত্র লক্ষ্যই ছিল মুসলিম সমাজকে কুসংস্কার মুক্ত করে একেশ্বরবাদে উদ্বুদ্ধ করে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো দেব-দেবির পূজা, কবর পূজা, সেজদা করা প্রভৃতিকে হারাম ঘোষণা করা।

২. কুসংস্কার দূরীকরণ-

মুসলমান সমাজে যে সকল কুসংস্কার, শিরক ও বিদআত অনুপ্রবেশ করেছিল তা দূর করার লক্ষ্যেই এ আন্দোলন পরিচালিত হয়। ইসলামি নিয়মবহির্ভূত পির পূজা, পুষ্প অর্পণ, ওরশ পালন, জন্ম, বিয়ে, মৃত্যুতে অযথা অপচয় ইত্যাদি কুসংস্কার দূর করার চেষ্টা করা হয়। ফরায়েজি আন্দোলনের মাধ্যমে পির মুরিদ উপাধি বিলোপের চেষ্টা করা হয়। কারণ এর ফলে পিরের ওপর, মুরিদ নির্ভরশীল হয়ে পরনির্ভর ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়। ফলে তারা অন্যায়-অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সক্ষম হয় না এবং ন্যায্য অধিকার আদায় সম্পর্কে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠতে পারে না। হযরত ইমাম হাসান-হোসেনের মৃত্যু দিবসে অযথা হৈচৈ, উঁচু সমাধি নির্মাণ, আলোকসজ্জা, আশরাফ-আতরাফ সম্পর্ক পরিহারের জন্য তিনি উদাত্ত আহ্বান জানান।

৩. বৈষম্য দূরীকরণ-

হাজী শরীয়ত উল্লাহ মনে করতেন, "বংশের পরিচয় বড় নয়, কর্মই হলো মানুষের মূল্যায়নের মাপকাঠি।" মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সুতরাং তারা অন্যের অন্যায় শোষণ মেনে নিতে পারে না। তাই ফরায়েজি আন্দোলনের মাধ্যমে ইংরেজ নীলকর ও জমিদারের অন্যায় শোষণের বিরুদ্ধে এবং সামাজিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে মুসলমানদেরকে উদ্বুদ্ধ করেন। সেই সঙ্গে তিনি আর্থসামাজিক বৈষম্য দূরীকরণের জন্য প্রচেষ্টা চালান।

৪. "দারুল হরব" ঘোষণা-

প্রখ্যাত মনিষী হাজী শরীয়ত উল্লাহ ব্রিটিশ শাসিত ভারতকে 'দারুল হরব' বা শত্রুকবলিত দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং তিনি ঈদ ও জুমার নামায আদায় নিষিদ্ধ করেন। মুসলমানদেরকে ব্যাপক সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে ফরায়েজি আন্দোলনের মাধ্যমে একেশ্বরবাদের প্রতি এবং সাম্রাজ্যবাদের মহান আদর্শ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান। আর ইংরেজদের কবল থেকে স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করে 'দারুল ইসলাম' প্রতিষ্ঠান দুর্বার আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানান।

৫. বিদ্রোহ ঘোষণা-

 ধর্মীয় সংস্কার ও গোঁড়ামি দূরীকরণের ক্রমশ সামাজিক সংস্কার আন্দোলনে রূপ নেয়। ব্রিটিশ সরকারের শাসন ও শোষণ এবং ব্রিটিশ সরকার সৃষ্ট নরপশু জমিদার ও সুদখোর মহাজনদের অত্যাচার ও উৎপীড়নের হাত থেকে শ্রমজীবী মানুষকে রক্ষা করার জন্য আন্দোলনকে আরো তীব্রতর করে তোলেন। আর ফরায়েজি আন্দোলনে শরিক হয়ে এই অসহায় শ্রেণি জমিদার, মহাজন ও নীলকর বণিকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রেরণা পায়। তারা আত্মপ্রত্যয়ী হওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করে।

উপসংহার-

পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটিশ শোষণের বিরুদ্ধে যে সকল মনীষী তাদের আন্দোলন করেন তাঁর মধ্যে হাজী শরীয়ত উল্লাহ অন্যতম। তার নেতৃত্বে ভারতীয় উপমহাদেশে নীলকরদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছিল। মুসলিম সমাজের বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, কুসংস্কার দূর করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এছাড়া সামাজিক, ধর্মীয় গোঁড়ামি দূর করতে ফরায়েজি আন্দোলন অভূতপূর্ব ভূমিকা রাখে। নীলবিদ্রোহ করে মুসলমান তথা বাংলার জনগণের অধিকার রক্ষায় এ আন্দোলন ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করে।

0 টি ভোট
মুসলমানদের শিক্ষা ক্ষেত্রে আলীগড় আন্দোলনের অবদান আলোচনা করো?

ভূমিকা-

 ব্রিটিশ ভারতে যেসব আন্দোলন সমাজসেবার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এর মধ্যে শিক্ষিত করে কুসংস্কারমুক্ত করার মানসে এ আন্দোলন গড়ে করেন স্যার সৈয়দ আহমদ খান। তিনি মুসলমানদের তোলেন। স্যার সৈয়দ আহমদ খান তার সমস্ত জীবন প্রধানত মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষা দীক্ষার বিস্তার সাধনেই ব্যয় করেন।

  • আলীগড় আন্দোলন-

ব্রিটিশ শাসিত ভারতে অধঃপতিত মুসলমানদেরকে কুসংস্কারমুক্ত করে আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের জন্য স্যার সৈয়দ আহমদ খান যে জাগরণ সৃষ্টি করেছিলেন ইতিহাসে তাই 'আলীগড় আন্দোলন' নামে পরিচিত।

শিক্ষা সংস্কারে আলীগড় আন্দোলনের অবদান অবিভক্ত, ভারতবর্ষে মুসলমানদের শিক্ষাক্ষেত্রে উৎকর্ষ সাধনের জন্য আলীগড় আন্দোলনের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। নিম্নে শিক্ষা ক্ষেত্রে আলীগড় আন্দোলনের অবদান তুলে ধরা হলো-

১. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ-

মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার বাস্তব আলো পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্যার সৈয়দ আহমদ খান অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ১৮৭৫৯ সালে মুরাদাবাদে নির্মিত স্কুল, ১৯৬৩ সালে গাজীপুরে নির্মিত স্কুল এবং ১৮৭৪ সালে আলীগড়ে স্থাপিত বিশ্ববিখ্যাত 'মোহামেডান অংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ' প্রভৃতি। এ আলীগড় কলেজকে কেন্দ্র করেই তার সকল সামাজিক আন্দোলন পরিচালিত হতো।

২. গ্রন্থ ও প্রবন্ধ প্রকাশ-

 স্যার সৈয়দ আহমদ খান তার স্বজাতিকে সচেতন করে তোলার জন্য এ সময় বিভিন্ন গ্রন্থ ও প্রবন্ধ লেখা শুরু করেন। সিপাহী বিপ্লবের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি ১৯৫৯ সালে উর্দু ভাষায় রচনা করেন 'আমহাব-ই-বাগওয়াতে হিন্দু নামক গ্রন্থ। উপরন্তু তিনি Thajib-al-Akhlaq পত্রিকায় বিভিন্ন প্রবন্ধ লিখে মুসলমানদের মধ্যে এই বিশ্বাস উদয়াটনের চেষ্টা করেন যে, পাশ্চাত্য চিন্তাধা রা বা জ্ঞানবিজ্ঞান ইসলামবিরোধী নয়।

৩. বিজ্ঞান সমিতি প্রতিষ্ঠা-

স্যার সৈয়দ আহমদ মুসলমানদের বিজ্ঞানমনস্ক করার জন্য ১৮৬৩ সালে গাজীপুরে বিজ্ঞান সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে এটি আলীগড়ে স্থানান্তরিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল কোনো বিজ্ঞান আলোচনা, প্রচার পাশ্চাত্য শিক্ষা সম্প্রসারণ, বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ প্রকাশ।

৪. অনুবাদ সমিতি প্রতিষ্ঠা-

বৈজ্ঞানিক গ্রন্থাবলি, ইতিহাস, সাহিত্য, কৃষি, ধর্ম প্রভৃতি গ্রন্থসমূহ অনুবাদ করে মুসলমানদের সহজবোধ ও সহজপাঠ্য করার জন্য তিনি ১৮৬৪ সালে একটি অনুবাদ সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে এটি সাহিত্য ও বিজ্ঞান সমিতি নামে অভিহিত হয়। এ সমিতির মাধ্যমে কুসংস্কারে নিমজ্জিত মুসলমানদেরকে আত্মসচেতন করে গড়ে তোলার প্রয়াস চালানো হয়।

৫. শিক্ষা কমিটি গঠন-

শিক্ষা লাভ করা জনগণের ন্যায্য অধিকার এ ধারণাকে বাস্তবায়ন করার জন্য স্যার সৈয়দ আহমদ খান ১৮৬৪ সালে উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলীয় জেলাগুলোতে শিক্ষা কমিটি গঠন করেন।

৬. ইসলামি শিক্ষার উন্নয়ন-

 জ্ঞানবিজ্ঞানের পাশাপাশি মুসলমানদেরকে ইসলামি অনুশাসন শিক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি গাজীপুরে ১৮৮৬ সালে ৬ মাদরাসাতুল উলুম প্রতিষ্ঠা করেন।

৭. সাময়িক পত্রিকা প্রকাশ-

মুসলমানদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করার জন্য ১৮৬৬ সালে বিজ্ঞান সমিতির পক্ষ থেকে আলীগড় ইনস্টিটিউট গেজেট নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করা হয়। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল একই কলাম উর্দু ও ইংরেজিতে প্রকাশ যাতে করে ভারতবাসী ও ইংরেজগণ প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবগত হতে পারে এবং উভয়ের সম্পর্কের উন্নতি ঘটে।

উপসংহার-

পরিশেষে বলা যায় যে, আলীগড় আন্দোলনের প্রবক্তা স্যার সৈয়দ আহমদ খান ছিলেন শিক্ষা ও সমাজসংস্কারকের অন্যতম সেরা কারিগর। মুসলমানদেরকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তিনি এক নব জাগরণের সৃষ্টি করেন।

"Sharif" র কার্যক্রম

স্কোরঃ
5,760 পয়েন্ট (র‌্যাংক # 1 )
প্রশ্নঃ
95
উত্তরঃ
94
মন্তব্যসমূহঃ
0
ভোট দিয়েছেনঃ
0 টি প্রশ্ন, 0 টি উত্তর
দান করেছেন:
0 সম্মত ভোট, 0 অসম্মত ভোট
প্রাপ্তঃ
0 সম্মত ভোট, 0 অসম্মত ভোট
...